ইজতেমা মাঠে হামলা: বিচার নিশ্চিতের দাবি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
গত ডিসেম্বরে টঙ্গী ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিমণ্ডল। এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ ও তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজামের সাথীরা। গতকাল ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাবলিগের নেতা মুফতি আমানুল হক, মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ ও মাওলানা ফজলুল করিম কাশেমীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
টঙ্গী ইজতেমা মাঠে হামলার ঘটনা বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি, ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা বাড়ানোর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে।
হামলার পটভূমি ও ঘটনার বিবরণ
গত ১৭ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা মাঠে সাদপন্থিদের হামলায় ৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। সংবাদ সম্মেলনে মুফতি আমানুল হক জানান, সাদপন্থিরা রাতের অন্ধকারে প্রায় ৩০ হাজার সশস্ত্র অনুসারী নিয়ে ইজতেমা মাঠে ঢুকে ২ হাজার নিরস্ত্র তাবলিগের সাথীর ওপর হামলা চালায়। তিনি অভিযোগ করেন, সাদপন্থিরা বারবার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে।বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশের নেতারা দাবি করেন, টঙ্গী ইজতেমা মাঠে হামলার পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র কাজ করছে। মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, “দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার জন্য বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা এগুলো করে যাচ্ছে।”সরকারের ভূমিকা ও শর্ত
মুফতি আমানুল হক জানান, সরকার ইতিমধ্যে সাদপন্থিদের টঙ্গী ইজতেমা মাঠে তাবলিগি কার্যক্রম চালানোর অনুমতি প্রত্যাহার করেছে। তিনি বলেন, “সময় স্বল্পতা ও বিদেশি মেহমানদের সম্মান রক্ষার্থে শুধুমাত্র এবারই তাদের ইজতেমা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর থেকে টঙ্গী মাঠে তাদের কোনো কার্যক্রম চলবে না।”সাদপন্থিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হয়। মুফতি আমানুল হক বলেন, সাদ অনুসারীরা সরকারি সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে। তিনি বিশেষভাবে ওসামা ইসলামের নাম উল্লেখ করে বলেন, “সরকারি পরিপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দিয়ে তিনি স্বীয় স্বার্থে প্রচার চালাচ্ছেন।” এ বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে ভুল স্বীকার করে প্রচার প্রত্যাহারের জন্য আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।বিচার ও শাস্তির দাবি
সংবাদ সম্মেলনে টঙ্গী ইজতেমা মাঠে হামলায় জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। এছাড়া আগাম জামিন বাতিল এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত পলাতকদের গ্রেপ্তারেরও দাবি তোলা হয়। মুফতি আমানুল হক বলেন, “দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সাদপন্থিদের টঙ্গী মাঠে ইজতেমা করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।”সরকারের প্রতি অনুরোধ
সংবাদ সম্মেলনে ডিসেম্বর মাসের সরকারি প্রজ্ঞাপনে ‘সহাবস্থান’ শব্দটি ব্যবহারের সমালোচনা করা হয়। মুফতি আমানুল হক বলেন, “এই শব্দটি ব্যবহারের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফেতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এটি সংশোধন করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।”টঙ্গী ইজতেমা মাঠে হামলার ঘটনা বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি, ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা বাড়ানোর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে।