বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত: গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
আগামীকাল রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে এই মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি বছরের মতো এবারও ইজতেমা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণাঃ
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন, ইজতেমার নিরবচ্ছিন্ন আয়োজন নিশ্চিত করতে আজ শনিবার রাত ১২টা থেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে নিম্নলিখিত সড়কগুলোতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে:
- টঙ্গী-কামারপাড়া রোড।
- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত।
- আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত।
এছাড়া ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলোকে গাবতলী হয়ে কোনাবাড়ী দিয়ে চলাচল এবং ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগড়া বাইপাস হয়ে ৩০০ ফিট সড়ক ব্যবহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কোনো পণ্যবাহী যানবাহন এসব সড়ক দিয়ে চলতে পারবে না। তবে, ইজতেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পুলিশের প্রস্তুতিঃ
বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করছে। ইজতেমা ময়দানে ও আশপাশের এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা, কন্ট্রোল রুম ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন,
"ইজতেমার মুরব্বিদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, আখেরি মোনাজাত সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা চাই, এই বৃহৎ আয়োজন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হোক। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।"
![]() |
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত: গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা |
আখেরি মোনাজাত পরিচালনায় মাওলানা জুবায়ের আহমেদঃ
এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি, কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। তার নেতৃত্বে লাখো মানুষ দোয়া করবেন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য।বিশ্ব ইজতেমার গুরুত্ব ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যঃ
বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন, যা প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। এটি হজের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা এখানে অংশগ্রহণ করেন।এই ইসলামী সমাবেশে তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা ইসলামি শিক্ষা, দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। ইজতেমার শেষ দিনে অনুষ্ঠিত আখেরি মোনাজাতে লাখো মানুষ অংশ নেন এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনায় দোয়া করেন।
ইজতেমার ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থাঃ
প্রথমবারের মতো বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে টঙ্গীতে স্থানান্তরিত হয়। শুরুতে ছোট পরিসরে হলেও বর্তমানে এটি বিশাল আকার ধারণ করেছে। ২০১৮ সাল থেকে তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্বের কারণে ইজতেমা এক পর্বে হলেও এখন আবার দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে যাত্রীদের জন্য পরামর্শঃ
যেহেতু আজ মধ্যরাত থেকে গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তাই যাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ:- প্রয়োজনে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করুন – যারা গাজীপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যাতায়াত করবেন, তারা গাবতলী হয়ে কোনাবাড়ী বা ৩০০ ফিট সড়ক ব্যবহার করতে পারেন।
- আগেভাগে রওনা দিন – যারা ইজতেমা অংশগ্রহণ বা জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণ করবেন, তারা যেন রাত ১২টার আগেই রওনা হন।
- অনলাইন সেবা ও যাতায়াত তথ্য অনুসরণ করুন – বিভিন্ন গণপরিবহন সংস্থা ও পুলিশের পক্ষ থেকে অনলাইনে আপডেট দেওয়া হবে, সেগুলো অনুসরণ করুন।
উপসংহারঃ
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দোয়ার সমাবেশ। এই পবিত্র আয়োজনে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নেবেন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণের কারণে নাগরিকদের আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক, এই কামনা সকলের।