বিশ্ব ইজতেমা ২০২৫: শর্তসাপেক্ষে সাদপন্থিদের অনুমতি তবে ভবিষ্যতে আর না

বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ, যা প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ—শুরায়ী নেজাম ও সাদপন্থি (মাওলানা সাদ অনুসারী)—এর মধ্যে বিরোধের কারণে ইজতেমা আয়োজন নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।

২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন নিয়েও এমনই এক জটিলতার অবসান ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শর্তসাপেক্ষে এবার সাদপন্থিদের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার অনুমতি দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে তাদের আর টঙ্গীতে ইজতেমা আয়োজন করতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্ত তাবলিগ জামাতের উভয় পক্ষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এক মোড় এনে দিয়েছে।

ইজতেমার অনুমতির শর্ত ও সরকারী সিদ্ধান্তঃ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্ব ইজতেমা দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে।

১ম পর্ব:

৩১ জানুয়ারি - ৫ ফেব্রুয়ারি: শুরায়ী নেজামের অনুসারীরা ইজতেমা আয়োজন করবেন।
৬ ফেব্রুয়ারি: তাঁরা ময়দান প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করবেন।

২য় পর্ব:

১৪ - ১৬ ফেব্রুয়ারি: সাদপন্থিরা বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করবেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি: তাঁরা ইজতেমা ময়দান প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করবেন।
২০ ফেব্রুয়ারি: ময়দান আবার শুরায়ী নেজামের অনুসারীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি হবে সাদপন্থিদের শেষ বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীর ময়দানে। পরবর্তী বছর থেকে তারা আর এখানে ইজতেমা আয়োজন করতে পারবেন না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারি
বিশ্ব ইজতেমা ২০২৫: শর্তসাপেক্ষে সাদপন্থিদের অনুমতি তবে ভবিষ্যতে আর না

শর্তসাপেক্ষে ইজতেমার অনুমতি: কেন এই সিদ্ধান্ত?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছে—

বিরোধ এড়ানো:

গত কয়েক বছর ধরে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে, যা কয়েকবার সংঘর্ষেরও রূপ নিয়েছে।

সুশৃঙ্খল ইজতেমা আয়োজন:

সরকারি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইজতেমা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে চাওয়া হয়েছে।

টঙ্গীর ময়দানের দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণ:

শুরায়ী নেজাম যাতে ভবিষ্যতে নির্বিচারে ইজতেমা আয়োজন করতে পারে, সে জন্যই ময়দান তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

সাদপন্থিদের প্রতিক্রিয়াঃ

সাদপন্থি নেতা রেজা আরিফ বলেছেন, "আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে বক্তব্য দেব।" অর্থাৎ, তারা এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ভবিষ্যতে তারা বিকল্প স্থান খুঁজবে নাকি সরকারি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবে, তা দেখার বিষয়।

আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন—
  • মোনাজাতের সময় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে।
  • সর্বমোট ৩৬৫টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো মাঠ পর্যবেক্ষণে থাকবে।
  • সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
এছাড়া, প্রথম পর্ব শেষে মাঠ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং পরে সাদপন্থিদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

সাদপন্থিদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জঃ

সাদপন্থিরা যদি পরবর্তী বছর থেকে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে না পারেন, তাহলে তাদের সামনে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ আসবে—

নতুন স্থান নির্ধারণ:

বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের বড় জমায়েতের জন্য বিকল্প কোনো স্থান নির্ধারণ করা সহজ কাজ হবে না।

সঙ্ঘবদ্ধতা বজায় রাখা:

টঙ্গী ইজতেমা ময়দানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নতুন স্থানে একই গুরুত্ব ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।

সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার প্রচেষ্টা:

তারা সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে, যাতে পরবর্তী বছরেও টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারে।

শুরায়ী নেজামের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ

এই সিদ্ধান্তের ফলে শুরায়ী নেজামের অনুসারীরা আগামী বছর থেকে এককভাবে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করতে পারবেন। এটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। তবে তারা কীভাবে পুরো আয়োজন পরিচালনা করবেন, তা আগামী বছর দেখার বিষয়।

উপসংহারঃ

বিশ্ব ইজতেমা শুধু একটি ধর্মীয় জমায়েত নয়, এটি বাংলাদেশের ইসলামী সংস্কৃতির একটি বিশাল অংশ। তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্বের কারণে ইজতেমা আয়োজন গত কয়েক বছর ধরে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

২০২৫ সালে শর্তসাপেক্ষে সাদপন্থিদের ইজতেমার অনুমতি দেওয়া হলেও, এটি তাদের জন্য শেষবারের মতো টঙ্গীতে আয়োজন। ফলে আগামী বছর থেকে তারা নতুন জায়গায় যেতে বাধ্য হবেন।

অন্যদিকে, শুরায়ী নেজামের অনুসারীরা আগামী বছর থেকে এককভাবে টঙ্গীতে ইজতেমার আয়োজন করতে পারবেন, যা তাদের জন্য একটি বড় বিজয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url