বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ: আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি
বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ, যা প্রতি বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপের প্রথম পর্ব আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে ইজতেমার সমাপ্তি হয়, যেখানে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাত ও মুসল্লিদের আবেগঘন পরিবেশঃ
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা ৩৬ মিনিটে আখেরি মোনাজাত সম্পন্ন হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। এ সময় মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং দেশ, জাতি ও বিশ্বমানবতার জন্য দোয়া করেন।মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। কেউ দুহাত তুলে, কেউ মাথা নিচু করে, কেউবা চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করছিলেন। হাজারো মানুষের সম্মিলিত "আমিন, আমিন" ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে তুরাগ নদের তীর ও আশপাশের এলাকা।
মুসল্লিদের ঢল ও ইজতেমার আয়োজনঃ
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপের প্রথম পর্ব ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়। এই পর্বে ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা অংশ নেন।ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবার বিশ্ব ইজতেমা দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে:
- প্রথম ধাপ: ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি (মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের প্রথম পর্ব)
- দ্বিতীয় ধাপ: ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি (মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের দ্বিতীয় পর্ব)
ময়দান পূর্ণ হয়ে গেলে মুসল্লিরা আশপাশের সড়ক, ফুটপাত, খোলা জায়গা, বাস-ট্রাকের ছাদ এমনকি আশেপাশের ভবনের ছাদেও অবস্থান নেন।
![]() |
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ: আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি |
বিশ্ব ইজতেমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে নিয়মিতভাবে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হয়ে আসছে। বিশ্ব ইজতেমা মূলত তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে আয়োজিত হয়, যেখানে মুসলিমদের ঈমান ও আমলকে শক্তিশালী করার জন্য কোরআন ও হাদিসের আলোকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের অংশগ্রহণঃ
এবারের ইজতেমায় ৭২টি দেশ থেকে ২১৫০ জন বিদেশি মেহমান অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, জাপান, ওমান, কানাডা, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা ছিলেন।বিশ্ব ইজতেমায় আগত বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ তাবু স্থাপন করা হয় এবং তাদের থাকা-খাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।
ইজতেমার শেষ দিনে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণঃ
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন, আখেরি মোনাজাতের দিন রাত ১২টা থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।বন্ধ রাখা হয়:
টঙ্গী-কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত এবং আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত।
বিকল্প পথ:
ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহন গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ী হয়ে চলাচল করতে বলা হয়।
এছাড়া, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চলাচল সহজ করতে বিশেষ ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করা হয়।
এছাড়া, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চলাচল সহজ করতে বিশেষ ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করা হয়।
বিশ্ব ইজতেমার গুরুত্ব ও প্রভাবঃ
বিশ্ব ইজতেমা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং পুরো বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সমাবেশ। এখানে মুসলমানদের ঈমান মজবুত করার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা, দাওয়াত ও তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শুধু ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত মুসল্লিরাই নন, বরং সারাদেশের মুসলিমরাও অংশ নেন। টিভি ও অনলাইনের মাধ্যমে লাখো মানুষ এই মোনাজাত সরাসরি দেখে এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরে বসেই এতে অংশগ্রহণ করে।
শেষ কথাঃ
২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপের প্রথম পর্ব আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে এবং ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে।বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক এবং এটি ইসলামী জ্ঞান অর্জনের একটি বড় মাধ্যম। লাখো মানুষের একত্রিত হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করা ও দ্বীনের পথে নিজেদের নিবেদন করার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। বিশ্ব ইজতেমার এ ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।