ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ শুরুঃ ময়দানে ড্রোন উড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। তাবলিগ জামাতের শুরায়ী নেজামের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপে দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিচ্ছেন। সোমবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়।

তবে এবারের ইজতেমায় একটি নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে—ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের দুই কিলোমিটারের মধ্যে অনুমতি ছাড়া ড্রোন উড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত রবিবার আখেরি মোনাজাত চলাকালে একটি ড্রোন আছড়ে পড়ার ঘটনায় মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং শতাধিক মানুষ আহত হন। এই ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) ড্রোন ব্যবহারের ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করে।

ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আয়োজন ও প্রস্তুতিঃ

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপের প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই দ্বিতীয় ধাপের জন্য ইজতেমা মাঠ প্রস্তুত করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা দলে দলে এসে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হয়েছেন। এবার দ্বিতীয় ধাপে অংশ নিচ্ছেন ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মাদপুর, মুন্সিগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাংগাইল, পাবনা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নওগাঁ ও বান্দরবানের মুসল্লিরা।

এবারের ইজতেমায় ৭৬টি দেশ থেকে প্রায় তিন হাজার ৫০ জন বিদেশি মুসল্লি এসেছেন। ইজতেমা ময়দানে তাদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ড্রোন দুর্ঘটনা ও আতঙ্কঃ

রবিবার আখেরি মোনাজাতের সময় ইজতেমা ময়দানের ২ নম্বর গেটের সামনে ও টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের পাশে দুটি ড্রোন আছড়ে পড়ে। এতে বিকট শব্দ সৃষ্টি হলে মুসল্লিরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন, ফলে বহু মুসল্লি আহত হন। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক মুসল্লি, যাদের মধ্যে ৪১ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ড্রোন দুটি হয়তো চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ময়দানে পড়ে যায়। তবে এটি ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত শুরু করে।

ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ শুরুঃ ময়দানে ড্রোন উড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা
ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ শুরুঃ ময়দানে ড্রোন উড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা

ড্রোন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাঃ

এই ঘটনার পরপরই গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেন, যেখানে বলা হয়:
“দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসলমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জনস্বার্থে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের দুই কিলোমিটারের মধ্যে অনুমতি ছাড়া ড্রোন, ড্রোন ক্যামেরা বা অন্য কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস উড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো।”
এ নিষেধাজ্ঞা ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কেউ এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কাদের ড্রোন আছড়ে পড়েছিলঃ

ঘটনার পর পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইজতেমার নিরাপত্তার জন্য পুলিশের নিজস্ব একটি ড্রোন আকাশে ছিল এবং সেটি সঠিকভাবেই কাজ করছিল। তবে কিছু ইউটিউবার ও সাংবাদিকও ড্রোন ব্যবহার করছিলেন, যা বিধ্বস্ত হতে পারে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) এনএম নাসিরুদ্দিন বলেন,
“আমরা নিশ্চিত নই কার ড্রোন ক্র্যাশ করেছে। কেউ বলছে দুটি, কেউ বলছে তিনটি ড্রোন আছড়ে পড়েছে। তবে এটা নিশ্চিত যে আতঙ্কের ফলে বহু মানুষ আহত হয়েছেন।”

ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ

ইজতেমার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এবার বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, আনসার ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে এবং পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

বিশেষ করে বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং ফরেন টেন্টে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ইজতেমার ধর্মীয় গুরুত্ব ও মুসল্লিদের অনুভূতিঃ

বিশ্ব ইজতেমা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সমাবেশ নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শিক্ষা ও দাওয়াতের অন্যতম বড় আয়োজন। এই ইজতেমায় মুসল্লিরা দ্বীনের দাওয়াত, আমল, আত্মশুদ্ধি এবং ইসলামের মূল শিক্ষা গ্রহণের জন্য একত্রিত হন।

মুসল্লিরা ইজতেমা নিয়ে দারুণ উৎসাহী এবং তারা চান এটি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হোক। তবে ড্রোন দুর্ঘটনার মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে সবাই সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইজতেমার আয়োজকরা।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ শান্তিপূর্ণভাবে চলছে, তবে ড্রোন দুর্ঘটনার পর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা ইজতেমার নিরাপত্তাকে আরও জোরদার করবে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও স্বস্তির কথা বিবেচনা করে এই নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে কার্যকর করা জরুরি।

ইজতেমা ইসলামের দাওয়াত ও তাবলিগের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। মুসল্লিদের চাওয়া, নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশে তারা দ্বীনি শিক্ষা ও ইবাদত চালিয়ে যেতে পারেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের ফলে আশা করা যায়, ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে এবং মুসল্লিরা স্বস্তিতে তাদের সময় কাটাতে পারবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url