কাকরাইলের চিঠি ফেব্রুয়ারি ২০২১

তারিখ: ১৯/০২/২০২১ ইং
৭ই রজব/১৪৪২ হিজরী

মোহতারামীন ওয়া মোকাররামীন আহলে শুরা ও জিম্মাদার সাথীগন, সকল জিলা-

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমতুল্লাহ ওয়া বারাকাতূহ।

উম্মিদ হয় খোদায়ে পাকের ফজল ও করমে খায়ের ও আফিয়াতের সঙ্গে থেকে দ্বীনের মোবারক মেহনতে মশগুল আছেন। রজব মাস আমাদের মাঝে আগমন করেছে এই মাস শুরু হলেই প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসালাম এই দু’আ খুব বেশি করে পড়তেন “

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلَّغْنَا رَمَضَانَ

অর্থ: হে আল্লাহ্ আপনি আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসের বরকত দান করেন এবং রমজান পর্যন্ত আমাদের হায়াতকে বাড়িয়ে দেন।”

রসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই মোবারক দোয়া আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, পবিত্র রমজান মাস যে কত বড় রহমত, মাগফেরাত ও হেদায়েতের জরিয়া যার আগমনের জন্য ইমামুল আম্বিয়া অধির ভাবে অপেক্ষমান থাকতেন। রাব্বুল আলামীনের তরফ থেকে বনী আদমের চিরশত্রু- শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, নফল ইবাদতকে ফরজ এর ছওয়াব ও ফরজ এর ছওয়াবকে ৭০ গুন বৃদ্ধি করা হয়। ঐ মোবারক নূরানী ও রুহানিয়াত ওহী বহনকারী ফেরেশতা জিবরাইল (আ:) যার ঘোড়ার খুরের রুহানিয়াতের কারনে শুল্ক বালুর ওপর সবুজ ঘাস পয়দা হয়ে যায়, যার এই জগতে আগমন হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং যার বরকত হতে জগতবাসী বঞ্চিত হয়ে গিয়েছিল। এই মোবারক মাসে আল্লাহ্ পাক জমিনে তাহারও আগমন ঘটায়ে থাকেন, যেন তার সাথে সম্পর্কিত বরকত সমূহের দরজা খুলে দেওয়া হয়। বেহেস্তের হুরগণকে নবরুপে সুসজ্জিত করে উহার দরজা গুলিকে উম্মুক্ত করা হয় ও দোজখের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আল্লাহ্ পাক এই মাসে রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার প্রিয় সাহাবাকেরাম গণকে বদরের যুদ্ধের মেহনত ও মোজাহাদা ওয়ালা সফরের দ্বারা গায়েবী শক্তি অর্থাৎ ফেরেশতাগণের অবতারনা ঘটিয়েছেন এবং সমস্ত আরব গোত্রগুলিকে ইসলামে দাখিল করার সফর “মক্কা বিজয়” এই মোবারক মাসেই হয়েছিল। তাই এই মোবারক মাসে মেহনত, মোজাহাদা, আল্লাহর রাস্তার নকল-হরকত ও রাত্রির দরদভরা দোয়া মানুষের অন্তরের সম্পর্ক ব্যাপকভাবে হকের দিকে ফিরিয়ে আনেন এবং সামান্য মনযোগদানকারীকেও আল্লাহ্ পাক বড় পুরষ্কৃত করেন।

তাই আনেওয়ালা মাহে রমজানে সারা দেশে মেহনত ও নকল হরকত ব্যাপকভাবে চালু করার জন্য, অদ্য কাকরাইল এর মাশোওয়ারাতে নিম্নে বর্ণিত তাকাজা সমূহের উপর সমস্ত জেলায় এক মেহনতের তরতীব করলে বহুতি ভাল হয়:-

(১) দীর্ঘদিন পর সরকার রমজান মাসে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষনা দেয়ায় প্রাইমারী, হাইস্কুলের শিক্ষক এবং সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগণের পিছনে গাস্ত করে, চিল্লার বা কম বেশি সময়ের জন্য তৈয়ার করে আল্লাহর রাস্তায় বের করার জোরদার মেহনত করা। প্রয়োজনে জেলার-জেলার সকল শিক্ষকদের জোড় করে তাশকিল অযুদে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে।

(২) বিগত দুই বছর বিভিন্ন হালতের কারনে কওমি মাদ্রাসা সমূহের ইমতেহানের পর তোলাবা ও ফারেগীন ওলামা হাযরাতগণ চিল্লা (কম বেশি সময়)/সাল লাগানোর ব্যাপারে বিঘ্নতা ঘটে। আল্লাহ্ পাকের অশেষ মেহেরবানী এই বছর হাইয়্যাতুল উলিয়া, বেফাক ও অন্যান্য বোর্ডের ইমতেহান যথা সময়ে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। তাই এখন থেকে উনাদের পিছনে মেহনত করে, বিভিন্ন মাসায়েলকে হাল করে আল্লাহর রাস্তার বের করার জন্য জানতোর মেহনত করা। প্রয়োজনে ওয়াক্ত লাগানো (১সাল/ তিন চিল্লা) ওলামা হাযরাতগণ ও পুরাতন সাথীদের দ্বারা ৭/১০ দিনের জামায়াত বানায়ে জেলার সকল মাদ্রাসার দাওর করার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।

(৩) রমজানে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে ছাত্র-নওজোয়ানদের এক বড় তবকা অবসর থাকবেন। তাদের পিছনে মেহনত করে ছাত্র- নওজোয়ানদের শক্তি ও জজবা নবুয়্যাতের কাজে ব্যবহার করার ফিকির ও কোশেষ বহুতি গুরুত্বপূর্ণ। কেয়ামতের দিন আল্লাহ্পাকের আরশের নিচে যারা ছায়া পাবেন তাদের মধ্যে নওজোয়ান বয়সের এবাদাতকারীরাও হবে, এছাড়া জোয়ানি কোন কাজে খরচ হয়েছে এই জরুরি প্রশ্নও কেয়ামতের দিন করা হবে। তাই অভিভাবকদের পিছনে গাস্ত করে ছাত্র নওজোয়ানদের এই মওকায় আল্লাহর রাস্তায় বের করার জন্য আনথক মেহনত করা।

আল্লাহ্ পাক আমাদের এই টুটা-ফাটা মেহনতকে ভরপুর কবুল ফরমান ও আখেরাতে উত্তম বদলা দান করেন। সকল সাথীদেরকে প্রতি সালাম ও দেওয়ার দরখাস্ত।

আরজ গুজার,
(হযরত মাওলানা রবিউল হক)
পক্ষে
আহলে শুরা, বাংলাদেশ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url