'জোবায়েরপন্থী' শব্দটি বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন: মূল শব্দ "শুরায়ী নেজাম"

তাবলিগ জামাতের ইতিহাস ও শুরা ব্যবস্থাপনাঃ

তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ১৯২৬ সালে এই আন্দোলন শুরু করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো এবং ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো প্রচার করা।

প্রথমদিকে একক আমিরের নেতৃত্বে পরিচালিত হলেও, ১৯৯৫ সালে বিশ্বব্যাপী তাবলিগের মুরুব্বিরা সিদ্ধান্ত নেন যে, এই মেহনত এখন থেকে শুরা বা পরামর্শমূলক ব্যবস্থাপনার অধীনে পরিচালিত হবে।

এই শুরা কমিটি ১০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়, যেখানে মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও মাওলানা জোবায়ের হাসানসহ অন্যান্য মুরুব্বিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

উল্লেখ্য মাওঃ সাদ কান্ধলভি ও মাওলানা জোবায়ের হাসান সাহেব চাচাতো ভাই ছিলেন।

'জোবায়েরপন্থি' শব্দের বিভ্রান্তিঃ

বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মধ্যে 'জোবায়েরপন্থি' শব্দটি ব্যবহৃত হলেও, এটি সঠিক নয়। আসলে, যারা শুরা ব্যবস্থাপনার অধীনে তাবলিগের কাজ করেন, তাদেরকে 'শুরায়ী নেজাম' বলা হয়। মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, "আমরা মাওলানা জোবায়েরকে এককভাবে অনুসরণ করি না, আমরা একটি জামাত বা কমিটিকে অনুসরণ করি, যাদেরকে তাবলিগের ভাষায় শুরা বলা হয়।" 

আর মাওলানা জোবায়ের হাসান সাহেব তার জীবদ্দশায় কখনো নিজেকে আমীর বলে দাবি করেননি। বরং তিনি সাদ সাহেবকে বারবার তাকিদ দিতেন শুরা সদস্য বাড়ানোর জন্য। যেহেতু অনেক শুরা সদস্য মারা গিয়েছিলেন।

কিন্তু সাদ সাহেব শুধু বলতো কি দরকার বাইরের লোকদের বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার। এখানে মানুষ আসে শুধু তোমার আর আমার জন্য। জুবায়ের সাহেব নরম তবিয়তের মানুষ ছিলেন বলে আর বাড়তি কোন কথা বলতেন না।

জুবায়েরপন্থী না শুরায়ী নেজাম কোনটা সঠিক শব্দ?
জুবায়েরপন্থী না শুরায়ী নেজাম কোনটা সঠিক শব্দ?

মাওলানা সাদ ও সাম্প্রতিক বিভাজনঃ

২০১৭ সালে মাওলানা সাদ নিজেকে একক আমির হিসেবে ঘোষণা করেন, যা তাবলিগ জামাতের ঐতিহ্যবাহী শুরা ব্যবস্থাপনার সাথে সাংঘর্ষিক।

তার কিছু বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় দারুল উলুম দেওবন্দ তার বিরুদ্ধে 'মাওলানা সাদের ফিকরি বে-রাহরবি' শিরোনামে ফতোয়া জারি করে। ফলে, তাবলিগ জামাতের মধ্যে একটি বিভাজন সৃষ্টি হয়, যেখানে মাওলানা সাদের অনুসারীরা 'সাদপন্থি' নামে পরিচিত হন।

ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাঃ

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে তাবলিগ জামাতের সকল সদস্যের উচিত শুরা ব্যবস্থাপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্বের পরিবর্তে পরামর্শমূলক পদ্ধতিতে কাজ করা।

এতে করে দাওয়াত ও তাবলিগের মূল উদ্দেশ্য সফল হবে এবং মুসলিম সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

সর্বোপরি, তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও বিভ্রান্তি দূর করতে সঠিক তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। 'জোবায়েরপন্থি' শব্দটি সঠিক নয়; বরং 'শুরায়ী নেজাম' শব্দটি ব্যবহার করা উচিত। এতে করে তাবলিগ জামাতের প্রকৃত কাঠামো ও উদ্দেশ্য সবার কাছে স্পষ্ট হবে এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সুসংহত হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url