বিশ্ব ইজতেমা ২০২৫: শুরায়ী নেজামের ইজতেমা এবার দুই পর্বে
বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সম্মেলন, যা প্রতিবছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। এটি দ্বীনি ইলম ও আমলের গুরুত্বপূর্ণ মেহনতের এক বৃহৎ ময়দান, যেখানে লাখো মুসল্লি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সমবেত হন। ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য হলো আত্মশুদ্ধি, দ্বীনের দাওয়াত, এবং ইসলামের মূল বার্তাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া।
২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বেঃ
এই বছর আলমী শুরার তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইন শা আল্লাহ।প্রথম পর্ব: ৩১ জানুয়ারি, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি (শুক্র, শনি, রবি)।
দ্বিতীয় পর্ব: ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি (সোম, মঙ্গল, বুধ)।
প্রথম পর্বের ৪২ জেলা:
ঢাকা(কাকরাইল, মিরপুর, ডেমরা, টংগী), ফরিদপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল,রাজবাড়ী, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, বগুড়া, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারি, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাও, হবিগঞ্জ, মৌলভিবাজার, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, চাদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনি, লক্ষীপুর।দ্বিতীয় পর্বের ২১ জেলা:
ঢাকা(মোহাম্মদপুর, সাভার, যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ), গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, শরীয়তপুর, মেহেরপুর, জামালপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, বরগুনা, ঝালকাঠি, বান্দরবান, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, রাঙামাটি।ইজতেমার বয়ানঃ
শুরায়ী নেজামের ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ মুরুব্বিরা ইজতেমার গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করবেন। অনুবাদের দায়িত্বে থাকবেন জুবায়ের সাহেব, ওমর ফারুক সাহেব ও আব্দুল মতিন সাহেব সহ কাকরাইলের শীর্ষ মুরুব্বিগন।![]() |
শুরায়ী নেজামের বিশ্ব ইজতেমা ২০২৫ এবার দুই পর্বে |
ইজতেমার বিভিন্ন নিশিস্তঃ
ইজতেমায় ছাত্র, খাওয়াস ও ওলামাদের জন্য বরাবরের মতোই আলাদা মজমা হবে। এছাড়া বধির ভাইদের জন্য আলাদা টেন্টের ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে জবানওয়ালা ভাইয়েরা তাদের তর্জমা করবেন এবং সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখবেন।বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য মেহমান অংশগ্রহণ করেন। মূলত ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ থেকে আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিরা আসেন।
বিদেশী মেহমানদের জন্য ব্যবস্থাপনাঃ
বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য মেহমান অংশগ্রহণ করেন। মূলত ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ থেকে আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিরা আসেন।
বিদেশি সাথীদের জন্য আলাদা টেন্টের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে তাদের ভাষার অনুবাদের জন্য দোভাষী নিয়োজিত থাকেন। ইজতেমার বিভিন্ন বয়ানে দাওয়াত, আত্মশুদ্ধি ও দ্বীনি শিক্ষা সম্পর্কিত আলোচনা উপস্থাপন করা হয়। বিদেশি মেহমানদের মধ্যে অনেকেই ইজতেমা শেষে আল্লাহর রাস্তায় চিল্লায় বের হন।
সাথীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা:
ইজতেমা মাঠে চট নাও থাকতে পারে, তাই প্রত্যেককে ১৮x১৮ ফুট সাইজের ১ খোপের জন্য আর ২ খোপের জন্য ১৮ ফুট বাই ৩৬ ফুট তেরপাল নিয়ে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।ইজতেমার আখেরি মোনাজাত কবে?
আখেরি মোনাজাত এবার দুই পর্বে আলাদা অনুষ্ঠিত হবে। ২ ফেব্রুয়ারী রবিবার সকালে প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত আর ৫ ফেব্রুয়ারী সকালে ২য় পর্বের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। পরামর্শক্রমে মোনাজাত পরিচালনা করবেন আলমী শুরার শীর্ষ মুরুব্বিদের মধ্য থেকে কেউ একজন। আখেরি মোনাজাতের দিন বরাবরের মতোই আশেপাশের রাস্তা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে।সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও পরামর্শ:
প্রথম পর্ব শেষে রবিবার সাথীরা বাড়ি ফিরবেন এবং একই দিনে দ্বিতীয় পর্বের জামাত মাঠে প্রবেশ করবে, যার ফলে তীব্র যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। আর সাথী ভাইদের এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা।বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা:
বিশ্ব ইজতেমা ২০২৫ উপলক্ষে মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৪টি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা করেছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) 'জুমা স্পেশাল' নামে একজোড়া ট্রেন চলবে। জুমা স্পেশাল-১ ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় ছেড়ে টঙ্গী পৌঁছাবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। একইভাবে, জুমা স্পেশাল-২ বিকেল ৩টায় টঙ্গী স্টেশন থেকে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে।
১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, জামালপুর এবং টাঙ্গাইল থেকে ২টি বিশেষ ট্রেন চলবে। জামালপুর থেকে প্রথম ট্রেনটি সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে টঙ্গী পৌঁছাবে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয় ট্রেনটি টাঙ্গাইল থেকে দুপুর ১২টায় ছেড়ে টঙ্গী পৌঁছাবে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে।
২ ফেব্রুয়ারি, রবিবার, আখেরি মোনাজাতের দিন ১০টি বিশেষ ট্রেন চলবে। ঢাকা থেকে টঙ্গী স্পেশাল-১ সকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে, স্পেশাল-২ সকাল ৫টায়, স্পেশাল-৩ সকাল ৫টা ২৫ মিনিটে এবং স্পেশাল-৪ সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যাবে।
টঙ্গী থেকে ফেরার পথে, টঙ্গী-ঢাকা স্পেশাল-১ সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে, স্পেশাল-২ সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে, স্পেশাল-৩ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে, স্পেশাল-৪ সকাল ১১টা ৭ মিনিটে, টঙ্গী-ময়মনসিংহ স্পেশাল-১ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে এবং টঙ্গী-টাঙ্গাইল স্পেশাল-২ দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ছাড়বে।
অতিরিক্ত কোচ সংযোজন:
সকল আন্তঃনগর মেইল/এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে কোচের প্রাপ্যতা এবং যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে।
বিশেষ ট্রেনের সময়সূচী:
বিশেষ ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়সূচী ও রুট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় রেলওয়ে স্টেশন থেকে জানা যাবে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিস মুসল্লিদের যাতায়াতকে সহজতর করবে এবং ইজতেমায় অংশগ্রহণকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করবে।
পরিশেষে আল্লাহ তাআলার কাছে এই আর্জি আল্লাহপাক এই ইজতেমাকে ফেতনা থেকে মুক্ত রাখুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর বানান।