কেন আলেমদের সাথে তাবলীগ করা উচিত এবং সাদ পন্থীদের সাথে নয়?

কেন আলেমদের সাথে তাবলীগ করা উচিত এবং সাদ পন্থীদের সাথে নয়?
কেন আলেমদের সাথে তাবলীগ করা উচিত এবং সাদ পন্থীদের সাথে নয়?
তাবলীগ একটি পবিত্র এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাওয়াতি কাজ, যা মুসলমানদের ঈমান মজবুত করতে, ইসলামের সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে এবং উম্মতের মধ্যে দ্বীনের সত্যিকারের চর্চা শুরু করতে সাহায্য করে। তাবলীগের মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেদের জীবনে ইসলামের শিখা প্রতিষ্ঠিত করি না, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মাঝে ঈমান ও আমলকে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টা চালাই। তবে এ মহান কাজটি যখন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তখন তা উম্মতের জন্য কল্যাণের পথ প্রশস্ত করে। কিন্তু যখন এ কাজটি ভুল পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, তখন এটি বিভ্রান্তি ও বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে।

বর্তমানে, তাবলীগের মধ্যে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী মতভেদ দেখা যাচ্ছে, বিশেষত মাওলানা সাদ সাহেব এবং তাঁর অনুসারীদের (সাদ পন্থীদের) কারণে। কিছু মানুষ তাঁদের সাথে তাবলীগ করতে ইচ্ছুক, তবে এই বিষয়ে হক্কানি আলেমদেরর অভিমত হলো, সাদ পন্থীদের সাথে তাবলীগ করার থেকে আলেমদের নেতৃত্বে তাবলীগ করা অনেক বেশি উপকারী ও নিরাপদ। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব কেন আলেমদের নেতৃত্বে তাবলীগ করা উচিত এবং কেন সাদ পন্থীদের সাথে কাজ করা উচিৎ নয়।

তাবলীগ: একটি পবিত্র দায়িত্ব

তাবলীগ শুধুমাত্র একটি প্রচারমূলক কার্যক্রম নয়, এটি একটি আআত্মশুদ্ধিমূলক ইবাদত। এই কাজের মূল লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর পথের দিকে আহ্বান করা, ইসলামের সঠিক শিক্ষাগুলো তাদের জীবনে বাস্তবায়িত করা, এবং উম্মতের মধ্যে সুন্নাহর চর্চা বৃদ্ধি করা। তাবলীগ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের আদর্শ থেকে শিক্ষা লাভ করে এবং তাঁরই অনুসরণে পরিচালিত হয়।

তাবলীগের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনের মূল ধারণা প্রসারিত করার চেষ্টা করা হয়। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছেঃ
"তোমরা নিজেদের মধ্যে এমন একটি দল তৈরী করো যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান জানাবে, এবং ভালো কাজের নির্দেশ দিবে, আর মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে।" (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪)

এখানে "কল্যাণের দিকে আহ্বান" বলার মাধ্যমে সঠিক পথের দাওয়াত প্রদান এবং মানুষের ঈমান ও আমলকে শক্তিশালী করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তাবলীগের কাজ যখন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তখন এটি উম্মতের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে সহায়তা করে এবং আল্লাহর পথে মানুষকে পরিচালিত করে।

আলেমদের নেতৃত্ব: সঠিক পথের দিকনির্দেশনা

তাবলীগের কাজ সঠিকভাবে করা একটি বিশেষ দক্ষতা, গভীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিষয়। আলেমগণ ইসলামের সঠিক জ্ঞানের ধারক ও বাহক। তাঁরা কুরআন, হাদিস, ইসলামী ইতিহাস এবং ফিকহের উপর গভীর জ্ঞান লাভ করেছেন। তাঁদের হাতে দ্বীনের সঠিক ব্যাখ্যা এবং আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাই, তাবলীগের কাজেও আলেমদের নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তাবলীগের মতো একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল কাজে, আলেমদের নেতৃত্ব অনুসরণ করা উচিত কারণ তাঁরা:

কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন:

আলেমরা কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁরা জানেন কীভাবে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে কাজ করতে হয়। আলেমদের নির্দেশনা ছাড়া তাবলীগের মতো একটি মহৎ কাজে সঠিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

আকীদার সঠিকতা বজায় রাখেন:

সঠিক ইসলামী আকীদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলেমরা কখনোই দ্বীনের মূলনীতির বিরোধী কোন কাজ করতে উৎসাহিত করেন না। আলেমদের দিকনির্দেশনা তাবলীগওয়ালাদের ঈমান এবং আমলকে সঠিক রাখে।

তাবলীগের ঐতিহ্য রক্ষা করেন:

তাবলীগ একটি ঐতিহাসিক এবং ১০০ বছর ধরে চলে আসা একটা প্রক্রিয়া। আলেমদের নেতৃত্বে তাবলীগের ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব, কারণ তাঁরা ইসলামিক মানহাজ এবং সুন্নাহর অনুসারী।

বিভ্রান্তি এড়িয়ে চলে:

আলেমরা ইসলামের মৌলিক দিকগুলো নিয়ে কখনো বিকৃতি ঘটান না। তাঁদের কাজের মাধ্যমে উম্মত বিভ্রান্তির মুখে পড়ে না এবং সঠিক পথের দিকে পরিচালিত হয়।

সাদ পন্থীদের সঙ্গে তাবলীগ: বিভ্রান্তির সূচনা

মাওলানা সাদ সাহেবের কিছু মতবাদ ও কর্মপদ্ধতি ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অনেক স্বীকৃত আলেম তাঁকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষার বিপরীতে বিভিন্ন মতবাদ পোষণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সাদ পন্থীদের সাথে তাবলীগ করা কিছু কারণে ক্ষতিকর হতে পারে:

ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার অভাব:

সাদ সাহেবের বিভিন্ন বক্তব্য এবং কার্যক্রম কুরআন ও সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক। তাঁরা অনেক সময় দ্বীনের সঠিক ব্যাখ্যা না দিয়ে, নিজেদের মতামত প্রচার করার চেষ্টা করেন। এইভাবে উম্মতের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

উম্মতের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি:

সাদ পন্থীদের মাধ্যমে তাবলীগের ঐতিহ্য ও একতা ভেঙে পড়েছে। তাঁদের মধ্যে এমন কিছু মতবাদ প্রচলিত যা উম্মতের মধ্যে শত্রুতা ও বিরোধ সৃষ্টি করছে।

বাড়াবাড়ি ও বিদআত:

সাদ পন্থীদের কিছু কার্যক্রম এবং অভ্যাস সুন্নাহবিরোধী। তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত করার চেষ্টা করছে, যা বিদআত হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

আলেমদের অবজ্ঞা:

সাদ পন্থীরা বিশ্বব্যাপী হক্কানি আলেমদের শিখানো পথ থেকে সরে গিয়ে নিজেদের বানানো পথ অনুসরণ করছেন। এতে দ্বীন শিক্ষার সঠিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ঐক্য নষ্ট হচ্ছে।

তাবলীগের কাজের লক্ষ্য: ঐক্য, শান্তি, ও সমাধান

তাবলীগের আসল উদ্দেশ্য হল উম্মতের মধ্যে একতা সৃষ্টি করা। আল্লাহ বলেন:
"তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না।" (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)

এটি এমন একটি নির্দেশনা যা তাবলীগের কাজের মূল উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে। তাবলীগ যদি একতা ও শান্তির দিকে পরিচালিত না হয়ে বিভক্তি ও ঝগড়ায় পৌঁছায়, তবে তা মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করে।

এদিকে, সাদ পন্থীদের সাথে কাজ করলে উম্মতের মধ্যে বিভক্তি আরো বাড়তে পারে, যা ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থী।

সঠিক আকীদা এবং আমল রক্ষা:

তাবলীগের মাধ্যমে আমাদের ঈমান ও আমলকে সঠিক পথে রাখতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব, যাতে আমরা সঠিকভাবে আল্লাহর পথে চলতে পারি। আলেমদের সাথে তাবলীগ করলে সঠিক আকীদা ও আমল রক্ষা করা সম্ভব। তাঁরা তাবলীগকারীদের সহীহ পথে পরিচালিত করেন।

সাদ পন্থীদের সাথে কাজ করলে আকীদা এবং আমলে বিভ্রান্তি আসতে পারে, কারণ তাঁদের কার্যক্রম ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

উপসংহার:

তাবলীগ একটি মহান দাওয়াতি কাজ, যা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। তবে, এই কাজটি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে তা বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। আলেমদের নেতৃত্বে তাবলীগ করা সঠিক পথের দিশারি। তাঁরা সঠিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তাবলীগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করেন। অন্যদিকে, সাদ পন্থীদের মতো বিভ্রান্তিকর পথ থেকে বিরত থাকা উচিৎ, যাতে দ্বীনের সঠিক ব্যাখ্যা এবং উম্মতের ঐক্য বজায় থাকে।

আসুন, আমরা আলেমদের দিকনির্দেশনায় তাবলীগের কাজ করি এবং ইসলামিক ঐক্য এবং শান্তির জন্য কাজ করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url