মাস্তুরাতের নজমের সাথীদের মুজাকারা
১. মজমায় শরীক হওয়ার তৌফিক পাওয়ায় প্রথমে শোকর আদায় করা।
২. আগের জামানায় কোন মা বোন নবীওয়ালা কাম করার সুযোগ পায় নাই। আখেরি জামানার উম্মত হওয়ার কারণে মা-বোনেরা নবীওয়ালা দাওয়াতের এই কাম করার সুযোগ পেয়েছেন এজন্য বেশি বেশি শুকর আদায় করা।
৩. নবীওয়ালা কাম নবীওয়ালা সিফাতেই করা উচিত। নবীদের দিল প্রশস্ত ছিল, উম্মত সম্পর্কে নবীদের দিল সাফ ছিলো। নবীরা কোন বিনিময় নেননি।
৪. এই কাম নিজের মনে করে করা এবং লাভকে সামনে রাখা তাহলে বেশি দিন করা যাবে। দোকানদার কাপড় ছড়ায়, জুতা সাফ করে দেয় মুচি, তরকারিওয়ালা ঘরে ঘরে তরকারি পৌঁছিয়ে দেয়। এসবে নিজের লাভের জন্য করে।
৫. তাকাযা পড়া করতে খুশি হওয়া, বোঝা মনে না করা।
৬. আমাকে বাছাই করার কারণে শুকর আদায় করি এবং আমল পুরা করার জন্য আল্লাহর কাছে তৌফিক চাই।
৭. চারটি আমলের মোজাকারা হবে। ১. এস্তেকবাল, ২. খেদমত, ৩. তালিম, ৪. তাশকিল। যাকে যে বিষয়ের জিম্মাদারী দেয়া হয়েছে তা ভালো করে শোনার চেষ্টা করি।
ক) এস্তেকবালঃ আগত মাস্তুরাতকে হাসিমুখে বরণ করা, সালাম করা, মুসাফাহা করা। এটা একটা সুন্নত আমল। আহালান সাহালান বলা। আহালান অর্থ পরিবারভুক্ত আর সাহলান অর্থ নিরাপদ। অর্থাৎ তারা যেন মনে করে আমি নিরাপদ দুর্গে প্রবেশ করেছি। তারা যেন মনে করে আমি আমার আপনজনের কাছে চলে এসেছি। আমার এস্তেকবাল দেখে যদি খুশী হয় তবে পরবর্তী আমলে মনোযোগ আসবে। আর যদি ঢুকতেই মনে কষ্ট পায় তবে পরবর্তী আমলে মনোযোগ আসবেনা। এস্তেকবালের মূল উদ্দেশ্যই হলো মেহমানের মন জয় করা। যেহেতু আমরা আগে আসবো এজন্য আমরা হলাম মেজবান। আমরা যদি কারো বাড়িতে যাই আর বাড়িওয়ালা মনভার করে থাকে তাহলে অল্প সময়ও ওই বাড়িতে থাকতে মন চায় না আর বাড়িওয়ালা যদি সাদরে গ্রহণ করে অর্থাৎ মেহমান দেখে যদি খুশি হয় তাহলে অল্প সময়ের জন্য আসলেও বেশি সময় থাকতে চাইবে। মূলকথা হলো একজন মাস্তুরাত এই মজমা থেকে খোরাক পাবে কি পাবে না এটা নির্ভর করছে এস্তেকবালের সাথীদের আমলের উপর। পারলে জুতা সেন্ডেলগুলো সোজা করে রাখা। ঢাকার এক জামাত গ্রাম এলাকায় গিয়ে মাস্তুরাতের জুতা সেন্ডেল সোজা করে রেখেছিলো এই ঘটনায় খুব তাছির হয়েছিলো।
তারতীবঃ ২ রুমের পক্ষ থেকে দুইজন গেটে থাকবে আর দুজন রুমে থাকবে। গেট থেকে আগত মাস্তুরাত কে এস্তেকবাল করে রুমের দুই সাথীর কাছে পৌঁছে দিবেন। আর তারা খালি জায়গা দেখে বসিয়ে দিবেন। বাচ্চাওয়ালী হলে পিছনের দিকে বসানোর চেষ্টা করবেন। জরুরত থাকলে খেদমতের সাথীদের হাওলা করে দেবেন।
খ) খেদমতঃ শহীদের পর আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল হলো খেদমত। খেদমতের দ্বারা মানুষের দীল জয় করা যায়। খেদমত করলে দীল নরম হয়। খেদমত করলে উম্মতের দরদ পয়দা হয়। অহংকার দূর হয়। দিল থেকে দোয়া পাওয়া যায়। খেদমত করলে খেদমত পাওয়া যায়। খেদমত করলে মহব্বত পয়দা হয়, পরিচিতি লাভ হয়, সর্বোপরি আমলের বরাবর নেকি পাওয়া যায়।
পাপী মহিলা কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাতি হয়েছে। জালিম বাদশা কুকুরকে খেদমত করে নাজাত পেয়েছে। আমরা যদি সৃষ্টির সেরা জীবকে খেদমত করি তাহলে কত বড় বদলা পাবো! মোটকথা খেদমত করলে খোদাকে পাওয়া যায়।
তরতীবঃ আগত মাস্তুরাতকে টয়লেট দেখিয়ে দেওয়া। টয়লেট পেপার রেডি রাখা। অযুর জায়গা দেখিয়ে দেওয়া। টেপ না থাকলে বদনা ভরে রাখা। পরিষ্কার গামছা রেডি রাখা।পরিষ্কার গ্লাসে পানি খাওয়ানো। জগ, গ্লাস, গামছা রেডি রাখা খেদমতের সাথীদের জিম্মায়।
গ) তালিমঃ ফাজায়েলে আমল থেকে পড়া। ছোট হাদিসগুলো প্রয়োজনে তিনবার পড়া। নিজে থেকে ব্যাখ্যা না করা। ফায়দা একবার পড়া। কঠিন শব্দগুলোর অর্থ বলা যেতে পারে। যেমন আজমত মানে গুরুত্ব, এহতেমাম মানে পূর্বপ্রস্তুতি, মোলাকাত মানে সাক্ষাৎ, মাহরূম মানে বঞ্চিত, ইন্তেজার মানে অপেক্ষা ইত্যাদি। নবীর উপর দরূদ স্পষ্ট করে পড়া। একবার দরুদ পড়লে চল্লিশটি ফায়দা। দশটি নেকী হবে দশটি গুনাহ মাফ হবে দশটি রহমত নাজিল হবে এবং জান্নাতে দশগুণ মর্যাদা বৃদ্ধি হবে। ইয়া রাসুলাল্লাহ এর জায়গায় রসুলুল্লাহ না পড়া। সাহাবীদের নাম আসলে রদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু স্পষ্ট করে পড়া। মা-বোনেরা মনোযোগ সহকারে শুনছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা। অর্থাৎ আমার সুন্দর করে তালিম করার কারনে যত মা-বোন আমল করবে সেই নেকি আমিও পাবো। যাদেরকে জিম্মাদারী দেওয়া হয়েছে তারা যেহেতু সময় লাগানো সাথী তাই যতটুকু সম্ভব আদব রক্ষা করে তালিম করার চেষ্টা করা।
তরতীবঃ দুই রুম যদি নির্দিষ্ট সময়ে একসাথে ভরে যায় তাহলে তো একসাথেই তালিম শুরু করবো। আর যদি এক রুম আগে ভরে যায় তাহলে ওই রুমের তালিম আগে শুরু হয়ে যাবে আর দ্বিতীয় রুমে পরে শুরু করবে। যাদের জিম্মায় তালিম দেওয়া হয়েছে তারা কিতাব বাড়ি থেকে নিয়ে আসবে এবং চিহ্ন আগে থেকে দিয়ে রাখবে।
ঘ) তাশকিলঃ এই মজমায় যেহেতু সবাই পুরান সাথী তাই তাশকিল করার কিছুই থাকে না। তারপরও বিভিন্ন ওজর-আপত্তি এর কারণে মা-বোনেরা নাম লেখাতে চায়না। মনে করে যে আমাকে তো নির্দিষ্ট করে বলে নাই। তাই গায়ে হাত বোলালে ভাই একটু কথা বললে নাম লেখানো সহজ হয়।
মহিষের পাল রাস্তায় চলছে, পিছন থেকে প্রাইভেটকার হর্ন দিচ্ছে। কিন্তু সাইড দেয় না। তারপর ড্রাইভার নেমে যখন মহিষের পিঠে ধাক্কা দিয়েছে তখন মহিষ বুঝেছে যে আমাদেরকে সাইট দিতে বলছে। এরপর একদিকে সরে রাস্তা দেয়।
অনেক সময় টাকা পয়সার ওজর দেয়, তখন সাহাবীদের কুরবানীর ঘটনা বলা যেতে পারে। মা বোনেরা যদি ভেতর থেকে তৈয়ার হয় তখন পুরুষদের জন্য হিম্মত করা সহজ হয়। হ্যাঁ যদি কোনো গ্রহণযোগ্য ওজর থাকে তবে ভিন্ন কথা। যেমন বাচ্চা ছোট, ওয়াক্ত পুরা হয় নাই বা ছুটির মাসয়ালা ইত্যাদি।
তরতীবঃ তাশকিল দুইবার হবে। প্রথম মজমার পর বিরতির আগে একবার আর দ্বিতীয় মজমার পর দুয়ার আগে।মাইক দিয়ে যেভাবে এলান করা হবে সেই অনুযায়ী তাশকিল হবে। তাশকিলের জন্য কাগজ মজমা থেকে দেওয়া হবে। তবে কলম নিয়ে আসা তাশকিলের সাথীদের জিম্মায়।