তাবলীগের ১২ কাজ কি কি?

তাবলীগের ১২ কাজ এটা এমন একটা উসুল যার উপর তাবলীগের সাথীরা আল্লাহর রাস্তায় সফর অবস্থায় জমে থাকে। ২৪ ঘন্টার আমলে জিন্দেগী বারো কাজের মাধ্যমে আবর্তিত হয়। তাবলীগের এই বারো কাজের মধ্যে চার কাজ বেশি বেশি করতে হয়, চার কাজ কম কম করতে হয় আর চার কাজ মোটেও করতে হয়না।

তাবলীগের ১২ কাজ এর মধ্যে যে চার কাজ বেশি করবোঃ

১। দাওয়াত
২। তালিম
৩। জিকির
৪। ইবাদত

১। দাওয়াতঃ উম্মতে মুহাম্মদির শ্রেষ্ঠত্ব হল দাওয়াতের কাজের জন্য। কোরআন পাকে এই উম্মতকে দাওয়াতের জন্য শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণেই এই উম্মত সবার পরে দুনিয়াতে আসলেও জান্নাতে সবার আগে যাবে। এজন্য সর্বাবস্থায় দাওয়তের হক জেনে সবাইকে দাওয়াত দিব। এলাকার মানুষদেরকেতো দাওয়াত দিবই এছাড়া নিজেরাও একজন অপরজনকে সবসময় দাওয়াত দিব।

২। তালিমঃ তালিমের দ্বারা আসমানী এলেমের নূর অন্তরে হাসিল হয়। তালিমের দ্বারা নেক আমল করার আগ্রহ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। বয়ানের চেয়ে তালিমের গুরুত্ব বেশি কারণ বয়ান বান্দার কথা আর তালিম হল আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কথা। এজন্য প্রতিদিন ৪ ঘন্টা সকাল-বিকাল তালিম এস্তেকামাতের সাথে করবো।

৩। জিকিরঃ জিকির দ্বারা অন্তরের ময়লা পরিষ্কার হয়। জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের স্মরণ তাজা হয় এবং শয়তান দূরীভূত হয়। সকাল বিকাল তিন তাজবিহাতের আমল করব, "সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার" । আকাবির বুজুর্গগন তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, "যে ব্যক্তি একাধারে তিন বছর সকাল-বিকাল এই তিন তাসবিহ এর আমল করবে আল্লাহ তা'আলা তাঁকে অলি না বানিয়ে দুনিয়া থেকে নিবেন না।" এছাড়া জায়গা বিশেষে প্রত্যেক মাসনুন দোয়া গুলোও আদায় করব।

৪। এবাদতঃ বিভিন্ন প্রকারের ইবাদত সারাদিন এস্তেমায়ী আমলের ফাঁকে ফাঁকে করব। যেমন নফল নামাজ, তেলাওয়াত, সাথীদের খেদমত ইত্যাদি আমলে মশগুল থাকবো। আর নিজের খেদমত নিজে করবো এবং সাথী ভাইদেরও খেদমত করবো। আরবি প্রবাদে আছে "মান খাদিমা, খুদিমা" অর্থাৎ যে খেদমত করে সে খেদমত পায়।

তাবলীগের বার কাজ এর মধ্যে যে চার কাজ কম করবোঃ

১। কম খাব
২। কম ঘুমাবো
৩। দুনিয়াবী কথা কম বলবো
৪। মসজিদের বাইরে কম সময় লাগাবো

১। কম খাবঃ কম খাব কথার অর্থ হল খানার ভেতর সময় কম লাগাবো। আমরা আমাদের পেটকে তিন ভাগ করে খাব এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি এবং এক ভাগ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবো। যাতে করে এবাদত ঠিকমতো করতে পারি।

২। কম ঘুমাবোঃ আমরা ঘুমের ভিতর কম সময় দিয়ে এবাদতে বেশি সময় লাগাবো। রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর সামনে নিজের মস্তক অবনত করব। এরকম যেন না হয় যে বাড়িতে কাজের চাপে যত ঘুম কাজা হয়েছিল তা আল্লাহর রাস্তায় এসে পুরা করছি। বরং আমলের জিন্দেগি বানাবো।

৩। মসজিদের বাইরে সময় কম লাগাবোঃ আমরা আল্লাহর রাস্তায় মসজিদের বাইরে সময়কে কম লাগিয়ে মসজিদের ভেতর সময়কে বেশি দেওয়ার চেষ্টা করব। মসজিদের ভেতর হলো ফেরেশতাওয়ালা পরিবেশ আর বাইরে গোমরাহীর পরিবেশ। প্রবাদ আছে যে ডিমগুলো মুরগির পাখার নিচে থাকে সেগুলোই ফুটে বের হয় আর যেগুলো মুরগির পাখার বাইরে থাকে সেগুলোই নষ্ট হয়। তাই মসজিদের পরিবেশে ফেরেশতাদের ডানার নিচে থাকার চেষ্টা করব।

৪। দুনিয়াবী কথা কম বলবঃ আল্লাহর রাস্তায় যত পারা যায় দুনিয়াব কথা কম বলব এবং আখেরাতের কথা বেশি বেশি বলবো। আখেরাতের কথা বেশি বলার দ্বারা অন্তরে ঈমান তাজা হয়, আল্লাহ পাকের স্মরণ পয়দা হয়। আর দুনিয়াবী কথা বেশি বললে অন্তর দুনিয়ার ধোকায় পড়ে আর আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়।

তাবলীগের বার কাজ এর মধ্যে যে চার কাজ মোটেও করবো নাঃ

১। সওয়াল করবো না
২। সওয়ালের ভান করবো না
৩। বিনা এজাজতে কারো মাল ধরবো না
৪। অপচয় করবো না


১। সওয়াল করব নাঃ সওয়াল বান্দার কাছে নয় বরং আল্লাহর কাছে করার অভ্যাস করব। বান্দার কাছে চাইলে বান্দা অখুশি হয় আর আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ খুশি হন। সাহাবা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমগন আল্লাহর কাছে চাইতেন। নিজের প্রচন্ড অভাব থাকা সত্ত্বেও কারো কাছে হাত পাততেন না। এজন্য সফর অবস্থায় আমরা কারো কাছে সওয়াল করবো না।।

২। সওয়ালের ভান করব নাঃ সওয়ালের ভান হলো সরাসরি না চেয়ে ঘুরিয়ে চাওয়া। কেউ পান খাচ্ছে তারপরও তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছি ভাই কি পান খাচ্ছেন। সওয়াল করা যেরকম অপছন্দনীয় আমল তদ্রুপ সওয়ালের ভান করাও একটি অপছন্দনীয় আমল।

৩। বিনা এজাজতে কারো মাল ধরবো নাঃ বিনা এজাজতে কোন সাথী ভাইয়ের কোন জিনিস ধরা ঠিক নয়। আমার এক সাথী ভাই আমলে বসে আছে, আমি জরুরত সারার জন্য বের হয়েছি তার জুতা নিয়ে। কিছুক্ষণ পর সে বের হয়ে দেখল তার জুতা নেই। সে পেরেশান হয়ে যাবে। আমার কারনে আমার সাথী ভাইয়ের কষ্ট হয়ে যাবে তাই এজাজত ছাড়া কারো জিনিসে হাত লাগাবো না।

৪। অপচয় করবো নাঃ হাদীসে এসেছে অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আল্লাহর রাস্তায় মাল খরচের দ্বারা নেকি হয় কিন্তু অপচয়ের দ্বারা গুনাহ হয়। প্রয়োজন হলে আমার মাল আমার একজন দুর্বল সাথীর পিছনে খরচ করব মেহমানদারীর জন্য খরচ করব তারপরও অপচয় করব না।
Next Post Previous Post