আপোষে জোড়মিল
১. আল্লাহতায়ালার ওয়াদা পূরনের জন্য কিছু আসবাব আছে, তারমধ্যে সবচেয়ে বড় আসবাব হলো আপোষে জোড়মিল। হাদীসে আছে, আল্লাহপাকের রহমতের হাত থাকে জামাতের উপর। জামাত তাকেই বলা হয় যাদের দীল এক। বাজারে অনেক লোক থাকলেও তাদের জামাত বলা হয়না কারন তাদের দীল এক না। আল্লাহতায়ালার নুসরত ও সাহায্য হলো জামাতের সাথে। মাওঃ ইউসুফ রহঃ বলেন নামজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, তাহাজ্জুত এমনকি তোমাদের সমস্ত ইবাদত যদি আরশে পৌঁছে যায় তবুও আল্লাহতায়ালার সাহায্য আসবে না যদি অন্তর বা দীল এক না হয়।
২. জোড়ের উপর আল্লাহর মদদ আসে আর তোড়ের উপর আল্লাহর মদদ সরে যায়। আমাদের জামাত যেমনই হোক যদি জামাতের মধ্যে জোড়মিল থাকে তবে আল্লাহতায়ালার মদদ আসবে। কোন কথা হয়ে গেলে সাথে সাথে মাফ চেয়ে নিবো। দাঈ সেসময় দাঈ হতে পারে যখন তার দীল সাফ থাকে।
৩. আবু দুজানা রাঃ মৃত্যুর সময় এক সাহাবী এসে দেখলো তার চেহারা চমকাচ্ছে। কি ব্যাপার তোমার চেহারা চমকাচ্ছে কেন? আবু দুজানা রাঃ বলেন দুটি কারনে ।
- আমি লা ইয়ানী বা অহেতুক কথা বলতাম না।
- আমার দীল প্রত্যেকের ব্যাপারে সাফ।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানা, আবু বকর রাঃ এর যামানা, উমর রাঃ এর যামানা, উসমান রাঃ এর যামানা প্রায় ত্রিশ বছর। এই সময় মুসলমানদের মধ্যে জোড় থাকার কারনে পঞ্চাশ হাজার সাহাবীও শহীদ হয়নি। কিন্তু যখন আপোষে তোড় পয়দা হয়েছে তখন এক সিফফিনের যুদ্ধে এক লাখ সাহাবা শহীদ হয়েছেন।
৫. আমরা একে অন্যের ভালাই চাই যেমন আমার মেয়ের ভালাই চাই, যেমন আমার মেয়ের ভালো বিয়ে হোক, তার সংসার সুন্দর হোক, তার উন্নতি হোক। ঠিক এরকম ভালাই সমস্ত মা বোনদের জন্য চাওয়া চাই।
৬. কিয়ামতের দিন এমন এক লোক আসবে যার কাছে খুব কম নেকী থাকবে কিন্তু তার জবান থেকে এমন কথা বের হয়েছে এর দ্বারা উম্মতের মধ্যে জোড় পয়দা হয়ে গেছে। আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে দাখিল করে দিবেন। আবার আরেকজন আসবে যার অনেক নেকী থাকবে কিন্তু তার কথার দ্বারা উম্মতের মধ্যে তোড় পয়দা হয়েছে। তার এই আমলের কারনে আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নামে ফেলে দিবেন।
৭. আল্লাহতায়ালা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চারটি আসবাব বলেছেন যার দ্বারা জোড়মিল বাকি থাকবে।
- নম্রতা।
- ক্ষমা করা।
- ক্ষমা চাওয়া।
- মাশোয়ারা।
৮. ভূল করনেওয়ালাদের উপর ধর পাকড় না করা। মানুষ ভূলের কেন্দ্র, দুর্বলতা আর দোষের কেন্দ্র। বেউসুলি করার উপরও উসুলের মোজাকারা হবে। উমর রাঃ বলতেন, বাতিলের আলোচনা বন্ধ করার মাধ্যমে বাতিলকে হত্যা করো।
৯. এক সাহাবী হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি আমার গোলামকে কতবার ক্ষমা করবো? এরশাদ হলো, দিনে সত্তরবার ক্ষমা করো। অর্থাৎ অসংখ্যবার ক্ষমা করো যার কোন সীমা নেই। জোড়মিলের সবচেয়ে বড় আসবাব হলো, সাথীদের মধ্যে ক্ষমা করার নিজাম তৈরি করা।
১০. মাশোয়ারার দ্বারা জোড়মিল আসে। মাশোয়ারা বিনয় পয়দা করে। মাশোয়ারা বড়ত্বের নাম না। মাশোয়ারার আহমিয়াত বুঝানোর জন্য কোরআনপাকে সূরা শুরাতে নামাজের সাথে মাশোয়ারাকে উল্লেখ করেছেন। নামাজ এমন এক ইজতেমায়ি ইবাদত যে যদি নামাজকে ইজতেমায়ি বানানো না হয়, তাহলে এমন সুন্নত ছুটবে যে যার দ্বারা মানুষ গোমরাহ হবে। জামাত ছাড়া নামাজ গোমরাহ করে দেয়ার মতো বস্তু।
১১. উম্মতের মধ্যে আপোষে জোড়মিল পয়দা করার জন্য বহু তরতীব বাতানো আছে, এখন প্রয়োজন হলো এর উপর আমল করা।
১২. তিন কাজ থেকে দূরে থাকলে আপোষে জোড় মিল পয়দা হবে।
- কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা না করা।
- দোষ তালাশ না করা।
- সমালোচনা না করা।
১৩. চার কাম করলে আপোষে মহব্বত পয়দা হবে।
- সালামঃ সালামের প্রচলন করা।
- কালামঃ কুশল বিনিময় করা।
- তোয়ামঃ হাদিয়া আদান প্রদান করা।
- কিয়ামঃ রাতে উঠে সাথীর নাম ধরে দোয়া করা।
১৪. মাখলুকের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যম হলো দুইটিঃ
- হক্ব আদায় করা।
- এহসান বা দয়া করা।
১৫. জোড় মিলের বড় উপায় হলো নিজেকে ছোট মনে করা, নিজেকে পাপোষ মনে করা। নিজেকে ছোট মনে করা হলো নবীদের ছিফত আর বড় মনে করা হলো শয়তানের খাসলত। কেউ নিজেকে বড় মনে করলে একজন ফেরেশতা তার ঘাড়কে নিচু করে দেয়। আর যে নিজেকে ছোট মনে করে আল্লাহতায়ালা তাকে ইজ্জত দান করেন।
১৬. এক সফরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথীদেরকে বিশ্রাম নিতে বলায় তারা বিক্ষিপ্তভাবে বিশ্রাম নেয়। তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শয়তান তোমাদেরকে বিক্ষিপ্ত করেছে। তারপর তারা এমনভাবে একত্র হয়েছেন যে এক চাদরে ঢাকা যায়। আমাদের মুরুব্বীরা বলেন জামাতের সাথীদের সামানা যদি একসাথে রাখা হয় তাহলে দীলও এক থাকে আর সামান পৃথক থাকলে দীলও পৃথক হয়ে যায়।
১৭. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথীদেরকে এমনভাবে ভালোবাসতেন সবাই মনে করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকেই বেশী ভালোবাসেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, "তোমরা কারও দোষের কথা আমাকে বলোনা।" অভিযোগ করা আপোষে জোড়মিলকে ভেঙ্গে দেয়।
১৮. জোড়মিলের চার শর্তঃ
- জবান ও দীল নরম।
- ক্ষমা করা।
- অন্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া।
- পরামর্শের সাথে চলা।
১৯. আপোষে ঝগড়া বিবাদ এতো খারাপ যার জন্য শবে ক্বদরের মতো এতো ফজিলতের রাত্রিও চিরতরে গোপন হয়ে গেলো। দুই মুসলমান ঝগড়া করছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু ঝগড়ার পরিবেশে গেছেন শুধু এই কারনে আল্লাহপাক এতবড় রহমতের জিনিস শবে ক্বদরের তারিখকে ভুলিয়ে দিয়েছেন।
২০.পৃথক পৃথক আংগুলের দ্বারা কোন কাজ করা যায় না। আর পাঁচ আঙ্গুল এক সাথে থাকলে অনেক শক্তিশালী কাজ করা যায়। একটি শলাকা দ্বারা কোন কাজ করা যায় না, কিন্তু অনেকগুলো শলাকা একত্র করলে এর দ্বারা অনেক কাজ করা যায়।
২১. আল্লাহপাক বলেন, আপনি যে এতো শানদার নবী এটা না বুঝে যদি কেউ খারাপ ব্যবহার করে তবে তাকে মাফ করে দিন। শুধু তাই নয় তার জন্য আমার কাছে মাফ চেয়ে নিন।
২১. দুয়া করা হে আল্লাহ আমি যেন আমাকে আমার চোখে ছোট আর অপরকে বড় দেখি।
২২. গীবত করার কারনে কিয়ামতের দিন আমলনামা ফাকা থাকবে।