tabligh 6 number bangla

দ্বীন হচ্ছে মানুষের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত সমস্ত অংগ প্রত্যংগ একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য চব্বিশ ঘন্টার জিন্দেগীতে আল্লাহ পাকের হুকুম এবং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকা অনুযায়ী ব্যবহার করা। যেমন ব্যবসা, বাণিজ্য, চাকুরী, রাজ্য পরিচালনা থেকে শুরু করে বিবাহ এমনকি প্রস্রাব পায়খানা খানা খাওয়া আত্মীয়ের সাথে কথা বলাসব কিছুই দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হবে যখন তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার হুকুম মোতাবেক এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকা অনুযায়ী হবে।

এই দ্বীন কিভাবে আমার মাঝে এবং সমস্ত মানব জাতির মাঝে আসতে পারে সেজন্য বুজুর্গানে দ্বিন কুরআন ও হাদীসের আলোকে সাহাবাদের জিন্দেগী থেকে ছয়টি গুনের কথা উল্লেখ করেছেন। গুণ ছয়টি হলোঃ
  • কালিমা বা ঈমান।
  • নামাজ।
  • এলেম ও জিকির।
  • একরামুল মুসলিমীন।
  • তাছহীহে নিয়্যত।
  • দাওয়াতে তাবলীগ।

মেহনত করে এই ছয়টি গুণ অর্জন করতে পারলে পুরা দ্বীন ইসলামের উপর চলা সহজ হয়। ছয়টি গুণকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
  • মাকছাদ বা উদ্দেশ্য।
  • ফজীলত বা লাভ।
  • হাসিল করার তরীকা।

অর্থাৎ এই ছয় গুণ আমার মধ্যে এবং সমস্ত মানব জাতির মধ্যে কিভাবে আসতে পারে সেই মেহনত করা।


কালিমার উদ্দেশ্যঃ

"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ"

এই কালিমার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং  হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল"

আল্লাহতায়ালা ছাড়া আমরা দুচোখে যা কিছু দেখি বা না দেখি যেম্নঃ আসমান, জমীন, পাহাড়, পর্বত, সৌর জগতের দৃশ্যমান অদৃশ্যমান দুনিয়ার উপরে ও নিচে যা কিছু আছে আসমান ও আসমানে যা কিছু আছে সমুদ্রে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে সবই মাখলুকাত বা গাইরুল্লাহ বা সৃষ্টি জগত। আল্লাহতায়ালা একাই এই সৃষ্টি জগতকে তৈরি করেছেন। তৈরি করার পিছনে কারও কোন সহযোগিতা নেই। হযরত জীবরাঈল আঃ থেকে নিয়ে পিপিলীকা পর্যন্ত আল্লাহপাক একাই হুকুম দিয়ে তৈরি করেছেন এই সমস্ত সৃষ্টি জগতের হায়াৎ, মওত, রিজিক, ইজ্জত, সম্মান সব কিছু আল্লাহতায়ালা একাই নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা যে সকল বস্তু দেখতে পাইনা যেমন ফেরেশতা, জীন, বাতাস, এগুলোও আল্লাহপাকের তৈরি।

আমরা জানি আগুন পুড়াতে পারে, কিন্তু নমরুদ যখন হয্রত ইব্রাহীম আঃ কে আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য বিশাল অগ্নিকান্ডের তৈরি করে ইব্রাহীম আঃ কে আগুনে ফেলেছিল, তখন ফেরেশতারা আল্লাহতায়ালার কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহ আপনার খলীলকে নমরুদ আগুনে ফেলেছে। ফেরেশতারা সাহায্যের অনুমতি চাইলেন। আল্লাহ তায়ালা বললেন তোমরা যেতে পারো তবে আমার খলীল যদি চায় তবে তোমরা সাহায্য করতে পারো। ফেরেশতারা এসে বললেন হে আল্লাহর খলীল, আপনি যদি চান তবে আগুনকে উড়াইয়া নিবো। ইব্রাহিম আঃ বললেন আল্লাহপাক হুকুম করেছেন কিনা? ফেরেশতারা বললেন হুকুম নেই তবে সাহায্যের অনুমতি আছে। আপনি বললে সাহায্য করতে পারি। ইব্রাহীম আঃ বললেন আমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। কারন তোমরাও মাখলুক আমিও মাখলুক। আমার আল্লাহ যদি চান তবে আমি আগুনে পুড়ে মরতেও রাজি আছি। তখন আল্লাহপাক হুকুম দিলেন হে আগুন ইব্রাহীমের জন্য শান্তিদায়ক ও ঠান্ডা হয়ে যাও। ইব্রাহিম আঃ কে আগুনে নিক্ষেপ করার পর একটি পশমও তার পুড়ে নাই।
আবার আমরা জানি ছুড়ির কাটার ক্ষমতা আছে। কিন্তু ইব্রাহীম আঃ যখন আল্লাহপাকের হুকুমে নব্যুয়তের শক্তিতে ধারালো ছুড়ি দ্বারা হযরত ইসমাইল আঃ কে কোরবানী দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তখন ইসমাইল আঃ এর একটি পশমও কাটতে পারে নাই। ইব্রাহীম আঃ যখন মনের কষ্টে ছুড়ি নিক্ষেপ করলেন, তখন ছুড়িটি পাথরের উপর গিয়ে পড়লো এবং পাথরটি দুই টুকরো হয়ে গেলো। অথচ একই ছুরি ইসমাইল আঃ কে কাটতে পারলো না। কারন, যেখানে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে কাটার হুকুম আছে কেবল সেখানেই শুধু ছুড়ি কাটতে পারবে। যেখানে কাটার হুকুম নাই সেখানে কাটতে পারবে না। মাখলুকের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই।

আবার মেরাজের রাত্রে জিবরাইল আঃ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ছিদ্রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌছার পর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল এবার আপনি একাই যান। আমি আর এক চুলও এগুতে পারবো না, তাহলে আমি আল্লাহপাকের নূরের তাজাল্লিতে পুরে ধ্বংস হয়ে যাবো। অর্থাৎ জীবরাইল আঃ নিজ ক্ষমতায়ও কিছু করতে পারে না।

তাই মেহনত করে মাখলুক থেকে কোন কিছু হওয়ার একীন আমার দীল থেকে বের করে দেই। এবং একমাত্র আল্লাহপাকের হুকুমে সব কিছু হওয়ার একীন আমার দীলে বসাই। এটাই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর উদ্দেশ্য।

কালিমার লাভঃ

১. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে বান্দা অন্তরের সহিত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাক্ষ্য দান করার পর মৃত্যু বরণ করবে সে নিশ্চয়ই বেহেশতে প্রবেশ করবে। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে আল্লাহপাক নিশ্চয়ই তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

২. ছহী হাদীসে বর্ণিত আছে যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, একটি সুসংবাদ তোমরা নিজেরাও শোন এবং অপরকে শুনাইয়া দাও। যে ব্যাক্তি এখলাসের সাথে কালিমা পড়বে সে নিশ্চয়ি বেহেশতে প্রবেশ করবে।

৩. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন একদা মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নিকট আরজ করেন হে আল্লাহ আমাকে এমন কোন জিনিস শিক্ষা দিয়ে দিন যা দ্বারা আমি আপনার জিকির করব। আল্লাহপাক বলেন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে থাকো। হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন এটাতো সকল বান্দারাই পড়ে থাকে। আল্লাহপাক বলেন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকো। মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আমি আমার জন্য খাস কোন একটা জিনিস চাইতেছি। এরশাদ হইলো হে মুসা যদি সপ্ত আকাশ ও সপ্ত জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অপর পাল্লায় রাখা হয় তবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়ালা পাল্লায়ই ভারী হবে।

৪. হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন ব্যাক্তি দিবা রাত্রির যেকোন সম্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করলো তার আমল নামা হতে পাপ সমূহ মুছিয়া যায়। তার পরিবর্তে নেকি লিখা হয়।
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এমন একটি কালিমা জানি যা আন্তরিকতার সাথে পাঠ করলে এই অবস্থায় তার মৃত্যু হলে তার জন্য দোযখ হারাম হয়। তা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

৫. হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কছম আল্লাহপাকের যার হাতে আমার জীবন। সমস্ত আসমান জমীন এবং তার উপর, ভিতর, নীচে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখিয়া অপর পাল্লায় কালিমা শাহাদাৎ রাখা হয় তবে কালিমার পাল্লায়ই ভারী হবে।


কালিমার পরের অংশ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামঃ

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূরানী তরীকা মানিয়া চলার মাঝেই দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও কামিয়াবী অর্থাৎ আমার জীবনের সমস্ত কাজ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকা অনুযায়ী করবো।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লাভঃ

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে আমার সুন্নতকে জিন্দা করলো সে আমাকে মহব্বত করলো। যে আমাকে মহব্বত করলো সে আমার প্রতিবেশী হয়ে অনন্তকাল জান্নাতে বাস করবে। এই কালিমার হাকীকত বুঝে আমি আমার জিন্দেগীকে পরিচালনা করি।

হাসিল করার তরীকাঃ

এই কালিমার ফজীলত জানিয়ে এনফেরাদি বা এজতেমায়ীভাবে দৈনিক কম পক্ষে বিশ জন লোককে দাওয়াত দেই এবং দোয়া করি, হে আল্লাহ যেভাবে কালিমা পাঠ করলে আপনি সন্তুষ্ট থাকেন সেই ভাবে কালিমা পড়ার তৌফিক আমাকে এবং সমস্ত উম্মতী ভাই ও বোনদের দান করুন।

এই কালিমা পড়ে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করলাম হে আল্লাহ,
  • মওত পর্যন্ত তোমার হুকুম মানবো।
  • তোমার নবীর তরীকা অনুযায়ী চলবো।
  • তোমার নাফরমানী কোন কাজ করবো না।
  • এবং আমি আমার নিজের মন মতো চলবো না।
কালিমা পড়ে আমি আল্লাহর গোলাম হলাম এবং আল্লাহ আমার মনিব।


নামাজের উদ্দেশ্যঃ

আল্লাহপাকের মহান হুকুম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। হাশরে ময়দানে সর্বাগ্রে ফরজ নামাজের হিসাব হবে। হাদীসে আছে যার নামাজ নাই ইসলামে তার কোন অংশ নাই।

উদ্দেশ্যঃ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে নামাজ আদায় করেছেন এবং যেভাবে আদায় করার জন্য সাহাবীদের শিক্ষা দিয়েছেন মেহনত করে সেভাবে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করা। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা সেভাবে নামাজ আদায় করো যেভাবে নামাজ আদায় করতে আমাকে দেখো। নামাজ পড়ার সময় দীলে যেন এই অবস্থা আসে যে আমি আল্লাহকে দেখছি। এই অবস্থা না হলে খেয়াল করতে হবে আল্লাহপাক আমাকে দেখছে। প্রতি রুকনে কমপক্ষে তিন বার খেয়াল করা আল্লাহপাক আমাকে দেখছেন।

নামাজের লাভঃ

১. হযরত আবু জর রাযিঃ বর্ণ্না করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সময় শীতকালে বাইরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন। তখন বৃক্ষ হতে পাতা ঝড়তেছিলো। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষের একটি শাখা হাত দিয়ে ধরলেন ফলে পাতা আরও বেশী করে ঝড়তে লাগলো। অতঃপর তিনি বললেন, হে আবু জর!  আবু জর বলিলেন হে আল্লাহর রাসূল আমি হাজির আছি। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমাইলেন মুসলমান বান্দা যখন আল্লাহর জন্য নামাজ আদায় করে তখন তার মধ্য হতে এই গাছের পাতা সমূহের মতো পাপ ঝড়িয়া পড়ে।


২. হযরত আবু হুরাইরা রাযিঃ হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন যে, আমি নবীয়ে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ফরমাইয়াছেন, আচ্ছা বলো দেখি তোমাদের কারও বাড়ির সামনে যদি একটি নহর থাকে এবং সেই ব্যাক্তি উক্ত নহরে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে তার শরীরে কি কোন ময়লা থাকতে পারে। ছাহাবারা আরজ করলেন কিছুই থাকবে না। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অবস্থাও তাই। আল্লাহপাক উহার দ্বারা নামাজীর যাবতীয় গুনাহসমূহ মাফ করিয়া দেন।

৩. হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহপাক এরশাদ ফরমাইয়াছেন, আমি তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছি এবং এই প্রতিজ্ঞা করেছি যে, "যে ব্যাক্তি এই নামাজ সমূহকে গুরুত্ত্ব সহকারে সময়মত আদায় করবে তাকে আপন জিম্মাদারীতে বেহেশতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যাক্তি এই নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হলো না তার ব্যাপারে আমার কোন জিম্মাদারী নাই।

৩. একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে ব্যাক্তি এহতেমামের সাথে ও গুরুত্ত্ব সহকারে নামাজ আদায় করবে আল্লাহপাক তাকে পাঁচ প্রকারে সম্মানিত করবেন। (ক) রুজী রোজগার ও জীবনের সংকীর্ণতা হতে মুক্ত করবেন। (খ) দ্বিতীয়তঃ তার উপর হতে কবরের আজাব হটিয়ে দিবেন। (গ) তৃতীয়তঃ কিয়ামতের দিন তার আমলনামা ডান হাতে দিবেন। (ঘ) চতুর্থতঃ পুলসিরাতের উপর দিয়ে সে ব্যাক্তি বিদ্যুতের ন্যায় পার হয়ে যাব। (ঙ) পঞ্চমতঃ সে ব্যাক্তি বিনা হিসেবে বেহেশতে প্রবেশ করবে।

নামাজ হাসিল করার তরীকাঃ

  • পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করি।
  • সুন্নত ও ওয়াজিব নামজগুলো ঠিক ঠিকমতো আদায় করি।
  • নফল নামাজ বেশি বেশি পড়ি।
  • ওমরি কাজা নামাজগুলো হিসেব করে আদায় করি এবং দোয়া করি, "হে আল্লাহ যেভাবে নামাজ আদায় করলে আপনি খুশি থাকেন সেইভাবে নামজ আদায় করার তৌফিক আমাকে এবং সমস্ত উম্মতী মুহাম্মদী ভাই ও বোনদের দান করুন।"


এলেমের উদ্দেশ্যঃ

নামাজ পড়তে হলে এলেম প্রয়োজন আছে। দ্বীনের উপর চলার জন্য এলেম জরুরী। আল্লাহতায়ালার কখন কোন আদেশ ও নিষেধ তা সঠিকভাবে জেনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকানুযায়ী আমল করা।

এলেমের লাভঃ

১. হযরত আবু দারদা রাযিঃ বলেন, আমি হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট শুনেছি, যে ব্যাক্তি এলেম শিক্ষা করার উদ্দেশ্যে কোন রাস্তা অবলম্বন করে আল্লাহতায়ালা তার জন্য বেহেশতের রাস্তা সহজ করে দেন এবং তালেবে এলেমের সন্তুষ্টির জন্য ফেরেশতারা আপন ডানা বিছাইয়া দেন এবং আসমান জমীনের সমস্ত মাখলুক তার জন্য এস্তেগফার করতে থাকে। এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।

২. হযরত আবু জর রাযিঃ বলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, তুমি যদি সকাল বেলায় গিয়া কালামুল্লাহ শরীফ হতে একটি আয়াতও পাঠ করো তবে তা একশত রাকাত নফল নামাজ পড়া হতে উত্তম হবে। আর ঐ সময় যদি তুমি এলেমের একটি অধ্যায় শিক্ষা গ্রহণ করো চাই তার উপর আমল করা হোক বা না হোক তবে তা হাজার রাকাত নফল নামাজ পড়া হতেও উত্তম হবে।

এলেম হাসিল করার তরীকাঃ

ফাজায়েলে এলেমগুলো তালিমের হালকায় বসে শিখি। মাসলা মাসায়েলের এলেমগুলো উলামা হযরতের খেদমত করে শিখি। এলেমের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দেই এবং দোয়া করি।



জিকিরের উদ্দেশ্যঃ

যার দীলে জিকির আছে তার দীল জিন্দা। আর যার দীলে জিকির নাই তার দীল মুর্দার সমতুল্য। সদা সর্বদায় আল্লাহর ধ্যান ও খেয়াল দীলে জমায় রাখা। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা আমাকে দেখতেছে এই অনুভূতি অন্তরে পোষণ করা।

জিকিরের লাভঃ

১. হযরত আবু দারদা রাঃ বলেন, যাদের জিহবা আল্লাহর জিকির দ্বারা তরতাজা থাকবে তারা হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যদি কারও নিক্ট অনেক টাকা পয়সা থাকে এবং সে তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে আর অপর এক ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিকির করতে থাকে তবে জিকিরকারীই উত্তম হবে।

জিকির হাসিল করার তরীকাঃ

  • কালিমা বেশি বশি পাঠ করি।
  • কোরআন তেলওয়াত করি।
  • মাছনুন দোয়াগুলো জায়গায় জায়গায় আদায় করি।
  • কোন হক্কানী পীরের ওজীফা থাকলে আদায় করি।
  • মানুষকে দাওয়াত দেই এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
  • কমপক্ষে বিশ জন লোককে সালাম দেই।
  • তিন তজবী সকাল বিকাল নিয়মিত আদায় করি।


একরামুল মুসলেমীনের উদ্দেশ্যঃ

প্রত্যেক মুসলমানকে কালিমার খাতিরে তার কিম্মত বুঝে আমার অন্তর থেকে কদর বা সম্মান করি। নিজেকে ছোট মনে করি। নিজের হক দাবাইয়া অপর ভাইয়ের হক আদায় করি। সমস্ত মাখলুকের হক আদায় করি।

একরামুল মুসলেমীনের লাভঃ

১. একজন মুসলমানের একটি হাজত পুরা করে দিলে আল্লাহপাক তার তেহাত্তরটি হাজত পুরা করে দিবেন। সর্বনিম্ন তার গুনাহকে মাফ করে দিবেন।

২. কোন ব্যাক্তি আপন ভাইয়ের একটি হাজত পুরা করে দেবার জন্য যদি রওয়ানা হয় তবে তা দশ বছর এতেকাফ করার চেয়েও উত্তম হবে। এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন এতেকাফ করে আল্লাহপাক তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি খন্দক দূরত্ব করে দেন। যার দূরুত্ত্ব আসমান ও জমীনের মধ্যবর্তী দুরত্ব হতেও বেশী।

৩. সবচেয়ে বড় একরাম হলো আল্লাহ ভোলা বান্দাকে আল্লাহর সাথে মিলিয়ে দেওয়া।

একরামুল মুসলেমীন হাসিল করার তরীকাঃ

  • বড়কে মান্য করা।
  • ছোটকে স্নেহ করা।
  • আলেমের তাজীম করা।
  • অন্যের হক ঠিকমতো আদায় করা।
  • নিজের হক মাফ করা।
  • অন্যের দোষ না দেখা।
  • কেউ কষ্ট দিলে মাফ করে দেওয়া।
  • নিজে যদি কষ্ট দেই সাথে সাথে মাফ চেয়ে নেওয়া।
  • সর্বদা মানুষের উপকার করার চেষ্টা করা।


তাছহিহে নিয়্যতের উদ্দেশ্যঃ

আমি যেকোন কাজ করবো শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য।

তাছহিহে নিয়্যতের লাভঃ

একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য ছহীহ নিয়্যতে আল্লাহর রাস্তায় একটি খেজুর বা খুরমা দান করলে সেই নিয়ামত বাড়াতে বাড়াতে আল্লাহপাক পাহাড় পরিমান করে দিবেন। আর নিয়্যত যদি ছহী না হয় তবে জান দিয়ে দিলেও কোন নেকী পাবে না।

তাছহিহে নিয়্যত হাসিল করার তরীকাঃ

  • আমি যেকোন কাজ শুরু করার পূর্ব থেকে শেষ পর্যন্ত বারবার নিয়্যতকে যাচাই করি।
  • নিয়্যত ছহী হলে শুকরিয়া আদায় করি।
  • আর যদি শয়তান নিয়্যতে ধোকা দেয় তাহলে তওবা করে নিয়্যতকে ছহীহ করার চেষ্টা করি।


দাওয়াতে তাবলীগের উদ্দেশ্যঃ


হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার সময় দ্বীনকে যে স্তরে রেখে গিয়েছিলেন মেহনত করে পুনরায় দ্বীনকে সেই স্তরে আনার চেষ্টা করা। আল্লাহর দেয়া জান মাল সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে নিজের জান মাল সময়ের সঠিক ব্যবহার শিক্ষা করা।

দাওয়াতে তাবলীগের লাভঃ

১. আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।

২. আল্লাহর রাস্তায় প্রতি কদমে সাতশত নেকী হয়, সাতশত গুনাহ মাফ হয় এবং জান্নাতে সাতশত গুন মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

৩. আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা নিজ ঘরে বসে সত্তর বছর ইবাদত করার চেয়েও উত্তম।

৪. আল্লাহর রাস্তায় নিজ প্রয়োজনে এক টাকা খরচ করলে সাত লক্ষ টাকা ছদকাহ ছওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহর রাস্তায় যেকোন নেক আমল করলে তা ঊনপঞ্চাশ কোটি গুণ বেড়ে যায়।

দাওয়াতে তাবলীগ হাসিল করার তরীকাঃ

এই দ্বীন জিন্দা করার জন্য হযরত বেলাল রাযিঃ কে উত্তপ্ত মরুভূমির বুকে চিৎ করে শুয়াইয়া টানা হেচড়া করা হতো এবং পাথর চাপা দিতো। খাব্বাব রাযিঃ কে জ্বলন্ত আগুনের অংগারের উপর চিৎ করে শুয়াইয়া টানা হেচড়া করতো। তবুও তারা দ্বিন ছাড়েন নাই। এমনকি দ্বীনের দাওয়াতও বন্ধ করেন নাই। আমরাও নিয়ত করি ইন শা আল্লাহ যারা তিন চিল্লা দিয়েছি তারা বিদেশ যাওয়ার নিয়ত করি। আর যারা তিন চিল্লা দিতে পারি নাই তারা তিন চিল্লার নিয়ত করি।
Next Post Previous Post