মাস্তুরাতসহ জামাতের হেদায়েতের কথার নমুনা

হেদায়েতের কথা শুরুর আগে জামাত বন্দির ফরমের সাথে সাথী মিলিয়ে দেখা। বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী। মাইক সেট, এস্তেমায়ী সামানা, ২ সেট কিতাব, অতিরিক্ত চাদর, ক্লিপ, রশি আছে কিনা তাহকিক করা। এস্তেমায়ী সামানা ২ সেট হলে ভাল হয়। বিশেষ করে থালা, গ্লাস ও দস্তর খানা পৃথক হওয়া ।

আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার শর্ত ও উসুলঃ

সফরে শরয়ী মাহরাম থাকা চাই। উত্তম মাহরাম হলো স্বামী। এহরাম অবস্থায় থাকা। হজের সফরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে যেমন দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয় ঠিক একই ভাবে থাকা। সুন্নতী লেবাস, নেকাবওয়ালা বোরকা হওয়া চাই, হাত-পায়ের নখেরও পর্দা করা, জামাতে ভারী গহনা ও দামী পোশাক ব্যবহার না করা। বাচ্চা সাথে না নেওয়া, পার্ট পাইম না লাগানো, ভারী বয়স্কা ও সবসময় অসুস্থ থাকে এমন মাস্তুরাত না নেওয়া। মাস্তুরাতের কথা মসজিদে এলান না দেওয়া । প্রয়োজন ছাড়া রাতে দেখা না করা। প্রয়োজনে বাড়ীতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা । জামাতের জিম্মাদার একজনই হবে।

আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার ফযিলত বলাঃ

আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার উদ্দেশ্য (সংক্ষেপে ৬ নম্বর বলা)

বার কামের মোজাকারাঃ

৪ কাম কম করা এর মধ্যে ১টি হলো মসজিদের বাহিরে কম সময় লাগানো । মা-বোনদের থাকার জন্য যে কামড়াটা দেওয়া হয়েছে সেটাই হলো তাদের মসজিদ। জরুরত ছাড়া কামড়ার বাইরে না যাওয়া।

ইনফেরাদী ও এস্তেমায়ী আমলে জুড়ার তরগীবঃ

ইনফেরাদী ও এস্তেমায়ী আমলগুলো খুলে খুলে বলা এবং পার্থক্য ও গুরুত্ব বুঝানো।

সফরের আদবঃ

মাস্তুরাত যে গাড়ীতে উঠবে মাহরাম ঐ গাড়ীতেই উঠবে। গাড়ীতে উঠা নামার সময় নিজ নিজ আহলিয়াকে ডাকা। আমীর সাব সবার আহলিয়াকে ডাকবে এমন না। চোখ ঢাকা থাকার কারণে হোচট খেতে পারে এজন্য হাত ধরে উঠানো এবং হাত ধরে নামানো । ড্রাইভারদেরকে পৃথক করে দাওয়াত দেওয়া । সফরে দাওয়াতের মওকা না থাকলে জিকির করা । মা-বোনদের কন্ঠেরও পর্দা করা চাই ।

বাসা দেখা ও মঞ্জিলঃ

ঢুকার আগে আবার বাসা দেখে নেওয়া। যিনি বাসা দেখবেন তার মাস্তুরাত নিয়ে প্রথমে ঢুকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলে ভাল হয়। মঞ্জিলের সময় মাস্তুরাতকে দাঁড়িয়ে না রাখা। দোয়ায় শরীক হওয়া মাস্তুরাতের জন্য জরুরী না। শরীক হলেও হাত না তুলা। শুধু আমিন বলা।

মাস্তুরাতগনের বাসায় ঢুকে করনীয়ঃ

পুরুষ লোক আছে কিনা নিশ্চিত না হয়ে নেকাব না খোলা। পরিচয় দেওয়া নেওয়া। পরিচয় দেওয়ার সময় আছমা, খাদিজা, ছালমা না বলে আহলিয়া অমুক, বিনতে অমুক বা উম্মে অমুক বলা। অগ্রিম কোন কথা না বলা। অর্থাৎ আপনি কি বাড়ীওয়ালী, উনি কি আপনার ছেলের বউ, সে কি কাজের বুয়া এরকম না বলা। নিজেদের ছামানা হেফাজত করা। বিশেষ করে হাতমোজা, পা মোজা, বোরকা সবার কালো রং হওয়ার কারণে বদল হতে পারে এজন্য ব্যাগে ভরে রাখা।

পর্চা তৈয়ারি ও আমির মানাঃ

মাস্তুরাত এবং পুরুষ সবার জন্য আমীর মানা জরুরী। যে আমীরকে মানল সে নবীকে মানল আর যে নবীকে মানল সে আল্লাহকে মানল। প্রথম দিন সময় কম থাকলে একজনকে তালিমের জিম্মাদারী দেওয়া। তালিমের ৩০মিনিট আগে জামাতের মা-বোনেরা মশ্ক করে নিবে। মশকের সময় এলাকার মা-বোন চলে আসলে তাকে পড়তে না বলা । আর যদি নিজে থেকে পড়ে তার ভুল না ধরা।

এস্তেকবালঃ

পর্দার মধ্যে থেকে হাসিমুখে এস্তেকবাল করা। এলাকার মা-বোন যেভাবেই আসুক না কেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করা।

তালিমঃ

সকালে ফাযায়েলে আমল এবং বিকালে ফাযায়েলে ছাদাকাত থেকে পড়া। তালিম শুরুর আগে মাঝে মাঝে তালিমের মৌজু অর্থাৎ আদব, উদ্দেশ্য, লাভ বলা । নীচু জায়গায় বসে তালিম করা।

৬ গুনের আলোচনাঃ

যে ৩০ মিনিট সহজ ভাষায় ৬ গুনের উপর কথা বলতে পারে তাকে জিম্মাদারী দেওয়া।

তাশকিলঃ

তাশকিলের সময় জামাতের সকল মা-বোন কথা বলতে পারে। তবে নাম লেখানোর ব্যাপারে জোড়াজুড়ি না করা।

জরুরত থেকে ফারেগ হওয়াঃ

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামায খানা ও অন্যান্য জরুরত থেকে ফারেগ হওয়া।

বিকালের তালিমঃ

কোন কারনে খানার দেরী হলেও নির্ধারিত সময়ে তালিম শুরু করা।

পুরুষদের পক্ষ থেকে বয়ানঃ

৬ নম্বরের উপর কথা বলা। বাচ্চাদের দ্বীনি তরবীয়ত, ঘরের তালিম, সাদেকী জিন্দেগীর উপরও কথা বলা যেতে পারে।

তাশকিলঃ

নগদ জামাতের তরগীব দেওয়া। তবে জোড়াজুড়ি না করা।

আছরবাদঃ

আছরের পরও যদি এলাকার মা-বোন থাকে তাদেরকে ইনফেরাদী দাওয়াত দেওয়া। এরপর নিজেদের আমল পুরা করা।

বাদ মাগরিব ইনফেরাদী আমল ও মোজাকারাঃ

মাগরিবের পর ইনফেরাদী আমল বলতে আওয়াবীন পড়া ও কোরান তেলাওয়াত পুরা করা। যারা পড়তে পারে না তারা শিখবে।

মোজাকারাঃ

ফজর বাদ পুরুষদের পক্ষ থেকে যে বিষয়ে মোজাকারা হয়েছে ঐ বিষয়ে মা-বোনেরা আপোষে মোজাকারা করবে।

এশা বাদঃ

ইনফেরাদী আমল শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া ।

ফজর বাদঃ

ইনফেরাদী আমল শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন-পুরাতন মিলে আপোষে ৬ নম্বর শেখা শেখানো ।

পুরুষদের পক্ষথেকে মোজাকারাঃ

বড়দের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিষয়গুলো মোজাকারা করা।

খেদমতের তরতীব ও তরগীবঃ

খানা মাস্তুরাতরা পাকাবে। প্রয়োজনে পুরুষরা পাকাতে পারে। তবে যে মাস্তুরাতকে খেদমতের জিম্মাদারী দেওয়া হয় সে যেন জিম্মাদারী আদায় করতে আগ্রহী হয় এজন্য ফাযায়েল বলা।

ঘরওয়ালাকে খানায় শরীক করার তরতীবঃ

সদস্য কম থাকলে খানা একসাথে হতে পারে। আর সদস্য বেশী থাকলে খানা আলাদা হওয়া মোনাসেব।

মোলাকাতের তরতীবঃ

মোলাকাতের উত্তম সময় হলো মাগরিবের পূর্ব মুহুর্ত। ২জন করে সাথী হওয়া। মোলাকাতের সময় যেন দরজা-জানালা বন্ধ থাকে।

মেহমানদারী ও হাদীয়া কবুলের তরতীবঃ

মাস্তুরাতগন কোন মেহমানদারী বা হাদীয়া কবুল করবে না। যদি কোন মাস্তুরাত হাদীয়া সরাসরি ভিতরে নিয়ে যায় তা মসজিদে পাঠানো ।

এলাকার মাস্তুরাত জুড়ানোর তরতীবঃ

প্রত্যেক আমলের শেষে মাস্তুরাতের অবস্থান ও আমলের সময় বলে দেওয়া। ঘর ঘর মোলাকাতের সময়ও পুরুষের মাধ্যমে দাওয়াত পৌঁছানো।

হালের তাকাজা পেশ করাঃ

হালের কোন তাকাজা থাকলে পেশ করা। যেমন জোড়, ইজতিমা ইত্যাদি।

*** দোয়া শেষে মুসাফাহা করা। ***
Next Post