মাস্তুরাতের সাপ্তাহিক ইজতেমায়ী তালিমের উসুলের মোজাকারা

১. ইজতেমায়ী তালিমের গুরুত্ব ও ফাজায়েল বলা।

২. ইজতেমায়ী তালিমের উদ্দেশ্য আলোচনা করা। উদ্দেশ্য মূলত তিনটিঃ
  • মদীনার মতো পরিবেশ কায়েম হওয়া।
  • ঘর ঘর তালিম ও ছয় গুণের আলোচনা শুরু হওয়া।
  • প্রতি দুই মাস পর পর তিন দিন থেকে শুরু করে তিন চিল্লা পর্যন্ত সাথীরা মাস্তুরাতসহ জামাতে বের হওয়া।

৩. তালিমের জন্য পরামর্শের তরতীব খোলাসা করা।

৪. পরামর্শে চারটি বিষয় ফয়সালা করা।
  • এস্তেগবাল।
  • তালিম।
  • ছয় গুণ।
  • তাশকিল।

৫. মাঝে মাঝে তালিমের আদব হতে পারে। প্রত্যেক আমলের জন্য একাধিক সাথী তায় করা যাতে একজন অনুপস্থিত থাকলে অপরজন সেই আমল পুরা করতে পারে।

৬. তালিমের প্রথম অংশ কিতাবী তালিম, তারপর ত্রিশ মিনিট ছয় গুণের আলোচনা এবং শেষ পনেরো মিনিট তাশকিল।

৭. এস্তেগবাল সম্পর্কিত আলোচনাঃ
  • কমপক্ষে দুই জন সাথী থাকা।
  • একজন পুরাতন ও আরেকজন নতুন সাথী থাকতে পারে যাতে নতুনরাও কাজ শিখে।
  • এস্তেগবালওয়ালার কাজ কি তা খোলাসা করা।

৮. তালিম সম্পর্কিত আলোচনাঃ
  • যিনি ভালো পড়তে পারেন তাকে তালিমের জিম্মাদারী দেওয়া।
  • মাস্তুরাতে সময় লাগাননি এমন মাস্তুরাতকেও তালিম দেওয়া যাবে।
  • একেবারে অল্প বয়স্কা মেয়েদেরকে তালিম না দেওয়া।
  • তালিমের আদব ও তালিম করনেওয়ালার করনীয় কি তা খোলাসা করা।
  • ১৫/২০ জন করে তালিমের হালকা বানানো।
  • ফাজায়েলে আমল ও ফাজায়েলে ছাদাকাত থেকে তালিম করা। হজ্জের সময় ফাজায়েলে হজ্জ এবং রমজানের সময় ফাজায়েলে রমজান থেকে তালিম করা।

৯. ছয় গুন সম্পর্কিত আলোচনাঃ
  • আধা ঘন্টা ছয় গুণ বলতে পারে এমন মাস্তুরাতকে ছয় গুণের জিম্মাদারী দেওয়া।
  • ভারী বয়স্কা পুরাতন সাথি হলে ভালো হয়।
  • ছয় গুণের মধ্যে পুরোপুরি ছয় গুণের আলোচনা করা।
  • সূর তুলে বা ছন্দাকারে মোজাকারা না করা।
  • ছয় গুণের মধ্যে পর্দার ব্যাপারে কোন আলোচনা না করা।
  • ছয় গুনের মধ্যে ডায়রী বা নোট বইয়ের বয়ান না পড়ে শুনানো।
  • মোবাইলে বা ক্যাসেটে রেকর্ড করা বয়ান না শুনানো।
  • ১৫/২০ জনের মজমা করে ছয় গুণের আলোচনা করা।
  • কোন প্রকার মাছলা মাছায়েলের আলোচনা না করা।

১০. তাশকিল সম্পর্কিত আলোচনা।

(ক) প্রত্যেক সপ্তাহে তাশকিল করা।

(খ) তিন ধরনের তাশকিল হবে। যথাঃ
  • আগামী তালিমের আগেই কে কে ঘরে তালিম শুরু করবে।
  • মাহরাম পুরুষদেরকে কে কে আল্লাহর রাস্তায় পাঠাবে।
  • মাস্তুরাতসহ জামাতে কে কে যাবে।

(গ) তাশকিল পুরাতন সাথী করলে ভালো হয়।

(ঘ) তাশকিল করার সময় ফাজায়েল শুনানো।

(ঙ) তাশকিল করার সময় পুরুষের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার লিখা।

(চ) তাশকিল করার সময় জোর জবরদস্তি না করা।

১১. বেশী থেকে বেশী মাস্তুরাত যাতে তালিমে জুড়তে পারে তার জন্য কিভাবে গাশত করতে হবে তার তরতীব বলা।

১২. মাস্তুরাতগণ তালিমে আসা যাওয়ার পথে আর কোন প্রোগ্রাম না করা। অর্থাৎ নিজের বাড়ি থেকে সরাসরি তালিমের মজমায় আসা এবং তালিম শেষে সরাসরি নিজের বাড়ি চলে যাওয়া।

১৩. তালিমে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হওয়া। এমন সময় ঘর থেকে বের হওয়া যাতে নির্দিষ্ট সময়ে তালিমে হাজির হওয়া যায়। তালিম শুরু হওয়ার ১৫/২০ মিনিট বা আধা ঘন্টা আগে হাজির না হওয়া বরং নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হওয়া।

১৪. আছরের আযান শুরু হওয়ার আগেই বা সাথে সাথেই তালিমের মজমা শেষ করা এবং মজমা শেষে দেরি না করে নিজের বাড়ি গিয়ে আছরের নামাজ আদায় করা।

১৫. দূর দূরান্ত থেকে মাস্তুরাতগণ আসবেন না। দূরের মাস্তুরাতগণ শর্ত পুরা করে তারাও তাদের মহল্লায় ইজতেমায়ি তালিম নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

১৬. সাধাসিধা পোষাক পরে তালিমে আসা। তালিমে বাচ্চা নিয়ে না আসা। যদি কেউ বাচ্চা নিয়ে আসেন তারা মজমার পিছনে বসবেন এবং যার যার বাচ্চা তিনি সামলাবেন। বাচ্চা সামলানোর জন্য কাউকে জিম্মাদারি না দেওয়া।

১৭. তালিম শেষে মাস্তুরাতগণ হাত তুলে দুয়া বা মুনাজাত করবেন না। যেদিন বয়ান হবে সেদিন পুরুষের পক্ষ থেকে দুয়া হবে। সেদিন মাস্তুরাতগণ দোয়ায় শরীক হবেন।

১৮. তালিমের দিন খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা না করা। শুধুমাত্র পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করা। খাওয়া কেউ নিয়ে আসলে ফেরত দেওয়া।

১৯. কোন প্রকার বেচা কেনা ও হাদিয়া লেনদেন না করা। তাসবীহ, মেসওয়াক, হাত অ পায়ের মোজা, বোরকা, কিতাব ইত্যাদি যাই হোকনা কেন সব ধরনের হাদিয়া ও বেচা কেনা বড়দের পক্ষ থেকে নিষেধ আছে। কেউ নিয়ে আসলে ফেরত দেয়া।

২০. তালিমের জন্য নির্ধারিত স্থান অর্থাৎ বাসা, বার, সময়, ইত্যাদি পরিবর্তন না করা। তালিমের দিন বাড়িওয়ালী বাড়িতে না থাকলে পরামর্শ করে মহল্লার কোন সাথীকে সেই বাড়ির জিম্মাদারী দেওয়া।

২১. তালিমের দিন এই মহল্লার অন্য বাসায় মাস্তুরাত জামাত থাকলে জামাত এবং মহল্লার তালিম উভয় আমলই চলবে। এলাকার মাস্তুরাতগণ যার যেখানে সুযোগ হয় সেখানে জুড়বেন।

২২. মাস্তুরাতগণ স্বামীর এজাজত নিয়ে তালিমে আসবেন। একজন মাস্তুরাত আশে পাশের যেকোন এক তালিমে এস্তেকামাতের সাথে জুড়বেন। অর্থাৎ একাধিক তালিমে জুড়বেন না।

২৩. যাদের ব্যাপারে পুরুষের পক্ষ থেকে ফয়াসালা হয়নি তারা কেউ তালিম, ছয় গুণ বা তাশকিল করতে চাইলে অন্যান্য মাস্তুরাতগন তাকে বুঝিয়ে দিবে যে পুরুষের পক্ষ থেকে যাদের ফয়সালা হয়েছে তারাই আমল করবে। মাস্তুরাতগণ নিজের আমলের জিম্মাদারী অন্যকে দিতে পারবেন না। যার ব্যাপারে ফয়সালা হয়েছে তিনিই সেই আমল পুরা করবেন।

২৪. মসজদওয়ার জামাতের সাথীরা যার যার মাস্তুরাতের নিকট খোজ খবর নিবে যে, মাশোয়ারা মোতাবেক তালিম চলতেছে কিনা। কোন বেউসুলী হলে মাশোয়ারা করে ঠিক করে নিবে।

২৫. বাড়িওয়ালীর কষ্ট হয় এমন কোন কাজ না করা। তালিমে এসে পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত আলোচনা না করা। একে অন্যের মোবাইল নাম্বার দেয়া নেয়া না করা। তালিমে আগত মাস্তুরাতগণ নিজেদের হাত ও পায়ের মোজা, বোরকা, জুতা স্যান্ডেল ইত্যাদি নিজেরাই হেফাজত করবেন।

২৬. বাড়িওয়ালী সম্পর্কিত আলোচনাঃ

  • বাড়িওয়ালীর ফাজায়েল বলা।
  • বাড়িওয়ালীর ছিফত বর্ণনা করা।
  • তালিমের সময় বাড়িওয়ালীর অন্য কোন কাজে মশগুল না থাকা।
  • তালিমের দিন এই বাড়িতে অন্য কোন প্রোগ্রাম না করা।
  • তালিমে আগত মাস্তুরাতগণ দ্বারা ব্যাক্তিগত ও সাংসারিক খেদমত না নেওয়া।
  • নয় বছরের উপর যত পুরুষ এই বাড়িতে আছে তালিম চলাকালীন সময় বাড়িতে অবস্থান না করা।
  • এই বাড়ির মাস্তুরাতগণ পূর্ণ পর্দার এহতেমাম করা। কারন এর প্রভাব আগত মাস্তুরাতগণের উপর পড়বে।

২৭. বয়ান সম্পর্কিত আলোচনাঃ
  • বয়ান এক থেকে দুই মাস পর পর হওয়া।
  • মাস্তুরাতে ওয়াক্ত লাগিয়েছে এমন মোনাছেব সাথীর দ্বারা বয়ান করানো।
  • বয়ান কোন দিন হবে তা গোপন রাখা।
  • কে বয়ান করবেন তা গোপন রাখা।
  • বয়ানের সময় কমপক্ষে দুই তিন জন পুরুষ উপস্থিত থাকা।
  •  বয়ান কে করবেন তা ইউনিয়ন বা হালকার পরামর্শে তায় হওয়া।
  •  বয়ানের মধ্যে ছয় গুণের আলোচনা করা।
  • হাসির কথা, কান্নার কথা, লজ্জাজনক কথা বয়ানে না বলা।
  • প্রত্যেক মাস্তুরাতকে দায়ী বানানোর জন্য তরগী দেওয়া ও জিম্মাদারী বুঝানো।
  • পর্দার ব্যাপারে তরগীব দেয়া যেতে পারে কিন্তু জোর জবরদস্তি না করা।
  • বয়ানের পর তিন ধরনের তাশকিল করা। (ক) আগামী তালিমের আগেই কে কে ঘরে তালিম শুরু করবেন। (খ) মাহরাম পুরুষদেরকে কে কে আল্লাহর রাস্তায় পাঠাবে। (গ) মাস্তুরাতসহ জামাতে কে কে যাবে?
Next Post Previous Post