তাবলীগ জামাতের সহজ গাস্তের আদব বা বয়ান

আসলে তাবলীগ জামাতের গাস্তের আদব বা বয়ান সহজ একটি আমল । তবে একজন নতুন সাথীর জন্য গাস্তের আদব ও ছয় নাম্বার বলাটা অত্যন্ত কঠিন লাগে। প্রথমত তার ভিতরে ভয় কাজ করে যে আমি পারবো কিনা? আর দ্বিতীয়ত এতো মানুষের মাঝে তার কথা বলার অভ্যাস নেই । এক্ষেত্রে প্রথমে আমাকে মনে করতে হবে আমার সামনে যারা বসে আছে তারাতো আমার জামাতেরই সাথী, তারাতো আমাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েই এখানে দাড় করিয়েছে। আর মহল্লার সাথী ভাই যারা আছে তারাতো জানেই আমি নতুন। তারা আমার ভুলগুলোকে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। এভাবে চিন্তা করলে আমার জন্য বলাটা সহজ হয়ে যাবে।

তাবলীগের গাস্তের আদবঃ

তাবলীগের গাস্তের আদব এর মধ্যে তিনটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে দাওয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝাতে হয়। দ্বিতীয় অংশে দাওয়াতের লাভ সম্পর্কে বলতে হয়। আর তৃতীয় অংশে দাওয়াতের তরতীব সম্পর্কে আলোচনা করতে হয়।

গাস্তের আদব বলার সহজ পদ্ধতিঃ

গাস্তের আদব বলার সহজ পদ্ধতিটি সম্পর্কে আমরা এখন আলোচনা করবো। আল্লাহপাকের হামদ ও ছানা পাঠের পর আমরা এভাবে বলা শুরু করতে পারিঃ

আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবানীতে আমরা আছরের চার রাকাত ফরজ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে পেরেছি। তারপর দ্বীনের এক উচু ফিকির নিয়ে কিছুক্ষণ বসার জন্য আল্লাহপাক আমাদেরকে তৌফিক দান করেছেন। এই জন্য আমরা সবাই দীল থেকে শুকরিয়া আদায় করি। সবাই বলি আলহামদুলিল্লাহ।

মানুষ যখনই দ্বীন থেকে গাফেল হয়ে গিয়েছে, আখিরাতকে ভূলে দুনিয়ামুখী হয়েছে কোন কোন কওম সংখ্যাধিক্যের বড়াই করেছে, কোন কোন কওম শক্তিমত্তার বড়াই করেছে, কোন কোন কওম শিল্পকলার বড়াই করেছে। আবার কোন কওম কৃষি কাজের মধ্যেই নিজেদের সফলতা বা কামিয়াবী পাওয়ার চেষ্টা করেছে অর্থাৎ যখনি মানুষ একমাত্র আল্লাহতায়ালার উপর ভরসাকে ছেড়ে আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর উপর একীন করেছে তখনই আল্লাহতায়ালা মানুষের কামিয়াবি ও নাজাতের জন্য পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক নবী বা রাসূলকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। নবী রাসূলগন মানুষকে আল্লাহতায়ালার একত্ববাদের দিকে ডেকেছেন অর্থাৎ দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করেছেন। যারা নবী রাসূলের কথা শুনেছেন এবং মেনেছেন তারাই কামিয়াবী হয়েছেন। আর যারা নবী রাসূলগণের কথা শুনেন নাই তারা দুনিয়াতেই আল্লাহর আজাবে গ্রেফতার হয়েছেন এবং আখিরাতে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। মোট কথা মাছের জন্য যেমন পানি জরুরী, সুস্থ মানুষের জন্য মাথা যেমন জরুরি, প্রাণিকূলের জীবন রক্ষার জন্য বাতাস যেমন জরুরী দ্বীনের দাওয়াত এর চেয়ে বেশী জরুরী। কারন দাওয়াত থাকবেতো দ্বীন থাকবে, দ্বীন থাকবেতো দুনিয়া থাকবে।

আল্লাহতায়ালা কোন কোন নবীকে তার কওমের জন্য, কোন কোন নবীকে একটি নির্দিষ্ট এলাকার জন্য, কোন কোন নবীকে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য, কোন কোন নবীকে একটি নির্দিষ্ট শহরের বাসিন্দাদের জন্য, কোন কোন নবীকে একটি নির্দিষ্ট জামানার জন্য প্রেরণ করেছেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক নবী রাসূল মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে এসেছেন। হযরত ঈসা আঃ এর পর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুয়্যত প্রাপ্তি পর্যন্ত কোন নবী দুনিয়াতে ছিলোনা। এই সময়ের মধ্যে দাওয়াতের কাজ বন্ধ থাকার কারনে আরবে কল্পনাতীত পাপ কর্মের আবির্ভাব হয়। এমন কোন পাপ কাজ ছিলো না যে তারা করে নাই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, নিজের মেয়ে সন্তানকে জ্যান্ত কবর দিয়েছে। সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে শত শত বছর ক্বওমে ক্বওমে মারামারি করত। এমনকি কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি ঢুকিয়েছিলো। এক একটা মূর্তিকে এক এক কাজের জন্য মাবূদ মনে করতো। এজন্য ঐ যুগকে আইয়্যামে জাহিলিয়াত বা অন্ধকার যুগ বলা হতো। আল্লাহতায়ালা দয়া পরবশ হয়ে কিয়ামত পর্যন্ত সারা দুনিয়ার সমস্ত মানব জাতির হেদায়েতের জন্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আখেরি নবী করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়ত প্রাপ্তির পর হতেই দাওয়াতের কাজ শুরু করেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুয়তের হায়াত মাত্র তেইশ বছর। এই অল্প সময়ের মধ্যে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে মেহনত করলেন যে, মক্কার সে সময়কার জঘন্য মানুষগুলো সোনার মানুষে পরিনত হলেন।

যারা দ্বীনকে ধ্বংস করেছিলো আবার তারাই দ্বীনকে জিন্দা করার জন্য জানমাল কুরবানী করে দুনিয়ার কোনায় কোনায় দ্বীনকে পৌছানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জ্বের সময় এই উম্মতের উপর দাওয়াতের কাজের জিম্মাদারী দিয়ে গেছেন। আল্লাহতায়ালা কোরআন পাকে এই উম্মতকে দাওয়াতের কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন ঐ ব্যাক্তির কথার চাইতে কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে।

যে কাজের জন্য আল্লাহপাক মানুষকে উত্তম বলেছেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কাজের জিম্মাদারী আমাকে আপনাকে দিয়েছেন, যে কাজ সমস্ত নবী আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ করেছেন, যে কাজ করার জন্য সাহাবাগণ দুনিয়া থেকে জান্নাতের খোশ খবর পেয়েছেন, এটা অনেক বড় উচা কাজ। এই কাজ যদি করতে পারি আল্লাহপাক আমাদেরকেও পুরুষ্কৃত করবেন।

গাস্তের ফজিলতঃ

ক্বুরআনহাদীসে গাস্তের ফজীলত অনেক এসেছে। এর মধ্যে কিছু লাভ এরকম।

  • এক সকাল এবং এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চাইতে উত্তম।
  • আল্লাহর রাস্তায় প্রতি কদমে সাত শত নেকী হয়, সাত শত গুনাহ মাফ হয় এবং জান্নাতে সাত শত গুণ মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
  • আল্লাহর রাস্তায় পায়ের ধূলা বালি আর জাহান্নামের ধুয়া কখনোই একত্রিত হবে না।
  • আল্লাহর রাস্তায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা আপন ঘরে বসে সত্তর বছর ইবাদত করার চেয়েও উত্তম।
  • আল্লাহর রাস্তায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা ক্বদরের রাত্রিতে হাজরে আসওয়াদ পাথরের পাশে দাঁড়িয়ে সারা রাত এবাদত করার চেয়েও উত্তম।
  • আল্লাহর রাস্তায় একেক কথার বিনিময়ে একেক বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম হবে।
এতবড় লাভের কাজ করার জন্য আমি নিজে তৈয়ার আছি আর কোন ভাই তৈয়ার আছেন মেহেরবানী করে বলেন।

গাস্তের তারতীবঃ

  • নিয়তকে খালেস করে শুধু মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করি।
  • জামাত বন্দী হয়ে যাবো, আল্লাহর রহমত থাকে জামতের সাথে।
  • জিকিরে ফিকিরে যাবো, অন্তরে থাকবে উম্মতের ফিকির আর জবানে থাকবে আল্লাহর জিকির
  • কালিমার খাতিরে একরামের সাথে নরম মেজাজে দাওয়াত দিবো।

জামাত বন্দী হতে কয়েক প্রকারের লোক লাগেঃ

  • রাহবার বা পথ প্রদর্শক।
  • একজন মুতাকাল্লিম যিনি দাওয়াত দিবেন।
  • কয়েকজন মামুর
  • একজন জিম্মাদার
বিঃ দ্রঃ জামাতের রাহবারী করার জন্য কোন কোন ভাই তৈয়ার আছেন? মুতাকাল্লিম এবং জিম্মাদার কে কে হবেন?

উমুমি গাস্তের দাওয়াতঃ

  • রাহবারের কাজঃ মহল্লার লোকদের দুনিয়াবী কাজ থেকে আলাদা করে মুতাকাল্লিম ভাইয়ের দিকে রুজু করে দেওয়া।
  • মুতাকাল্লিমের দাওয়াতঃ মুতাকাল্লিমের কথা হলো তিনটি। তাওহীদ, আখিরাত ও রিসালাতের কথা বলে নগদ মসজিদের দিকে আনার চেষ্টা করা। কথা যেন এতো লম্বা না হয়ে যায় যেন বয়ান হয়ে যায়। আবার এতো ছোট না হয়ে যায় যেন এলান হয়ে যায়। লোকের অবস্থা বুঝে নরম মেজাজে দাওয়াত দিতে হবে।
  • মামুরের কাজঃ আল্লাহর রাস্তায় চলার সময় জবানে থাকবে জিকির এবং অন্তরে থাকবে ফিকির। যখন মুতাকাল্লিম দাওয়াত দিবেন তখন মামুর ভাইগন জিকির বন্ধ করে ফিকির করবেন, হে আল্লাহ মুতাকাল্লিম ভাইয়ের মুখ থেকে সহীহ কথা বের করে দাও এবং যাকে দাওয়াত দিতেছে তাকে নগদ কবুল করে নাও।
  • জিম্মাদারের কাজঃ জিম্মাদারের কাজ সাথীদেরকে আমলে জুড়িয়ে রাখা।

গাস্তের আদব সংক্ষিপ্তঃ

আপনি যদি গাস্তের আদব সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে চান তাহলে  আমার এই লেখাটিও পড়তে পারেন। 

গাস্তের আদব pdf

আপনি যদি গাস্তের আদব pdf  আকারে ডাউনলোড করতে চান তাহলে গুগল ড্রাইভের এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন।

গাস্তের এলানঃ

ইন-শা-আল্লাহ, দুয়াবাদ মহল্লায় দাওয়াতের আমল হবে এবং মসজিদে ঈমান ও একীনের কথা হবে। আমরা সবাই বসি, বসলে বহুত ফায়দা হবে।
অথবা,
ইন-শা-আল্লাহ, দুয়াবাদ মহল্লায় দাওয়াতের আমল হবে এবং মসজিদে এই বিষয়ে কথা হবে। আমরা সবাই বসি, বসলে অনেক ফায়দা হবে।
Next Post Previous Post