বড়দের বলে যাওয়া কিছু আমল
![]() |
বড়দের বলে যাওয়া কিছু আমল |
আজানের সময় আমলঃ
১। আজানের জওয়াব দেওয়া।
মুয়াজ্জিন যখন বলেন: "الله أكبر الله أكبر"
উত্তর: "الله أكبر الله أكبر"মুয়াজ্জিন: "أشهد أن لا إله إلا الله"
উত্তর: "أشهد أن لا إله إلا الله"
মুয়াজ্জিন: "أشهد أن محمداً رسول الله"
উত্তর: "أشهد أن محمداً رسول الله"
মুয়াজ্জিন: "حي على الصلاة"
উত্তর: "لا حول ولا قوة إلا بالله"
মুয়াজ্জিন: "حي على الفلاح"
উত্তর: "لا حول ولا قوة إلا بالله"
মুয়াজ্জিন: "الله أكبر الله أكبر"
উত্তর: "الله أكبر الله أكبر"
মুয়াজ্জিন: "لا إله إلا الله"
উত্তর: "لا إله إلا الله"
২। আজানের শেষে দুআ পড়া।
আযান শেষ হলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে এই দোয়া পড়তে বলেছেন—"اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة، آت محمداً الوسيلة والفضيلة، وابعثه مقاماً محموداً الذي وعدته"
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! এই পূর্ণ আহ্বানের ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব! আপনি মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সুপারিশের স্থান এবং মহিমা দান করুন এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত মর্যাদায় পৌঁছে দিন, যা আপনি তাঁকে ওয়াদা করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬১৪)৩। দরূদে ইব্রাহীম পড়া।
দরুদ ইব্রাহীম (আরবি):
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد،اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد.
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ'লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আ'লা ইবরাহীমা ওয়া আ'লা আ'লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ'লি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আ'লা ইবরাহীমা ওয়া আ'লা আ'লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য, মহান।হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য, মহান।
৪। কবরের সওয়াল জবাব পড়া।
আরবি:
رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا
বাংলা উচ্চারণ:
রাদিতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়া বিলইসলামি দ্বীনা, ওয়া বিমুহাম্মাদিন নবিয়্যা।বাংলা অর্থ:
আমি আল্লাহকে আমার পালনকর্তা হিসেবে, ইসলামকে আমার ধর্ম হিসেবে এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার নবী হিসেবে গ্রহণ করলাম ও সন্তুষ্ট হলাম।ফজিলত:
- এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ হয়।
- ঈমান ও আকিদা আরও দৃঢ় হয়।
- দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর হয়ে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৫। কালিমায়ে শাহাদাত পড়া।
কালিমায়ে শাহাদাত (আরবি):
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُবাংলা উচ্চারণ:
আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ।বাংলা অর্থ:
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসুল।ফজিলত:
ক) ঈমানের মূল ভিত্তি:খ) এটি ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, যা একজন মানুষকে মুসলিম বানায়।
গ) হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এই কালিমা অন্তর থেকে বিশ্বাস করে ও পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায় (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৯৯)।
ঘ) রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কালিমা পড়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম, হাদিস: ২৬)।
ঙ) এই কালিমার মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য লাভ করে।
মুসিবতের সময় চার আমলঃ
১। নামায পড়া ।
নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে এবং বিভিন্ন মুসিবত ও বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে। কুরআন ও হাদিসে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে।কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
"হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।"এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, বিপদ-মুসিবতের সময় ধৈর্য ধারণ করা এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত।
হাদিসে এসেছে:
হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর কোনো কঠিন পরিস্থিতি আসতো, তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।"এছাড়াও, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "মুমিন নারী-পুরুষের বিপদ-মুসিবত লেগেই থাকে। এ বিপদ-মুসিবত তার শারীরিক, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে হতে পারে।"
উপরোক্ত কুরআন ও হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় যে, নামাজ মুমিনদের জন্য মুসিবত ও বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায়। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করলে তিনি আমাদের বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তি দেন এবং শান্তি প্রদান করেন।
২। দুআ করা।
আল্লাহ বলেন,
"তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।" (সূরা আল-মুমিন: ৬০)"দোয়া বিপদকে প্রতিহত করে এবং ভবিষ্যৎ বিপদ থেকে রক্ষা করে।" (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৮)
রাসুল (সা.) বলেছেন,
"দোয়া ক্বদর (নিয়তি)-কে পরিবর্তন করতে পারে।" (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৯০)৩। সদকা দেওয়া।
ক) সাদকা বিপদ থেকে রক্ষা করে
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—
"সাদকা বিপদ-আপদ দূর করে এবং দীর্ঘ জীবন দান করে।"(মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস: ১৫১৯)
খ) সাদকা আল্লাহর গজব থেকে রক্ষা করে:
হাদিসে এসেছে—
"গোপনে দান করা আল্লাহর গজবকে নিবারণ করে এবং খোলাখুলিভাবে দান করা (বিপদ) দূর করে।"(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ১৮৬২)
গ) বিপদ আসার আগে সাদকা করা উচিত:
রাসুল (সা.) বলেন—
"বিপদ আসার আগে সাদকা করো, কারণ তা বিপদ দূর করে।"(তিরমিজি, হাদিস: ৬৭৪)
ঘ) রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির উপায়:
নবী (সা.) বলেছেন—
"তোমরা তোমাদের রোগীদের সাদকা দ্বারা চিকিৎসা করো।"
(আবু দাউদ, হাদিস: ২৮৬৭)৪। তওবা করা।
ক. তওবা করলে আল্লাহ বিপদ দূর করেন:
আল্লাহ তাআলা বলেন—
"তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা তোমাদের শক্তিশালী করবেন এবং তোমাদের জন্য উদ্যান সৃষ্টি করবেন।"(সূরা নূহ: ১০-১২)
খ. বিপদ থেকে বাঁচার জন্য তওবার নির্দেশ:
আল্লাহ বলেন—
"তারা কি দেখে না যে, তারা প্রতি বছর এক বা দুইবার বিপদে পতিত হয়? তবুও তারা তওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।"
(সূরা তাওবা: ১২৬)গ. তওবা ও ইস্তিগফার গুনাহ এবং বিপদ মোচন করে:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—
"যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করবে, আল্লাহ তার প্রতিটি সংকট থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, তার প্রত্যেক দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন এবং তাকে অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিজিক দান করবেন।"
(আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৮)ঘ. জাতির ওপর আজাব আসার অন্যতম কারণ গুনাহ, আর তওবা তা প্রতিহত করে:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
"যখন কোনো জাতি আল্লাহর অবাধ্য হয়, তখন তিনি তাদের ওপর বিপদ ও আজাব পাঠান, তবে যারা তওবা করে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন।"(তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৫১)
ঙ. নবী ইউনুস (আ.)-এর দোয়া:
নবী ইউনুস (আ.) মাছের পেটে থাকা অবস্থায় এই দোয়া করেছিলেন, যা বিপদ-মুসিবত দূর করার জন্য অত্যন্ত উপকারী:لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
(লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জালিমিন)
(সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৭)
অহংকার দূর করার আমলঃ
১। বেশী বেশী সালাম দেওয়া
রাসুল (সা.) বলেছেন—
"যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দেয়, সে অহংকার থেকে মুক্ত থাকে।"২। ছোট ছোট খেদমত করা
রাসুল (সা.) বলেছেন—
"যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য সেবা করে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেন।"(তিরমিজি, হাদিস: ২৩)
৩। গরীবের সাথে উঠা-বসা করা
রাসুল (সা.) বলেছেন—
"যে ব্যক্তি গরীবদের সাথে চলবে, সে দুনিয়ায় সুখী এবং আখিরাতে শান্তিতে থাকবে।"(মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪)
৪। মউতের মোরাকাবা করা
রাসুল (সা.) বলেন—
"যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা বেশি স্মরণ করবে, তার অন্তরে অহংকার কমে যাবে।"(মুসলিম, হাদিস: ২৯৩)
"তোমরা মৃত্যুর কথা বেশি স্মরণ করো, যা তোমাদের পৃথিবীজীবনের অহংকার ও দম্ভ দূর করবে।"
(মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস: ১৬০৬)
চার আমলে কাজ থেকে বের হয়ে যাবেঃ
১। গোপনে কবীরা গুনাহ করা।২। বড়দের দোষ দেখা।
৩। মসজিদের সাথে বেয়াদবি করা।
৪। আজানের সময় শোরগোল করা।
তিন আমলে এই কাজ করাবেনঃ
হযরতজী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি তিন কাজ করবে তার দ্বারা আল্লাহ্পাক এই কাজ করিয়ে নিবেনঃ
১। পাবন্দীর সাথে নিজের হেদায়েতের নিয়্যতে দুই গাস্থ করা।২। যে ব্যক্তিই বয়ান করুক না কেন তা ফিকিরের সাথে শুনা।
৩। তিন দিনের জামাত অপরিচিত এলাকায় ও দুর্বল মসজিদে যাওয়া।
তিন আমলে কাজ থেকে বের করে দিবেনঃ
১। যে ব্যক্তি মিম্বরে বসে বয়ান করার দ্বারা তৃপ্তি পাবে।২। যার খাওয়াছ লোকের সাথে বেশী মোলাকাত করার ইচ্ছা থাকে।
৩। কাজের মধ্যে নাই কিন্তু বেশী বেশী মাশোয়ারা করে।
কাজ করনেওয়ালার দুই আমল জরুরীঃ
১। মেহনত।২। সোহবত।
মানুষ তিন কারনে আমল করেঃ
১। নামের জন্য।২। দামের জন্য।
৩। রেজায়ে এলাহীর জন্য।
তিন জিনিসের হেফাজত তিন জিনিসের দ্বারাঃ
১। কালিমা হেফাজত হবে আখলাকের দ্বারা।২। নামায হেফাজত হবে এখলাসের দ্বারা।
৩। এলেম হেফাজত হবে আল্লাাহতায়ালার রাস্তায় জান মাল খরচের দ্বারা।