ইজতেমার আখেরি মোনাজাত বাংলাদেশের লক্ষ কোটি মুসলমানের এক আবেগের নাম। ইজতেমার ময়দান থেকে লাখো জনতা সরাসরি এই মুনাজাতে অংশ নেয়। এছাড়া লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই দুয়ায় শরীক হয়।
আখেরি মোনাজাত এর উদ্দেশ্য
আখেরি মোনাজাত এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার কাছে নিজের কৃত গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে সেই গুনাহ না করার জন্য আল্লাহপাকের কাছে অংগীকার করা হয়। দেশ এবং দেশের মানুষের মংগল কামনা করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করা হয়।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ২০২৫
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ২০২৫ বিপুল সংখ্যক মুসুল্লির অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হয়। আশেপাশের রাস্তাগুলো আগের দিন রাত থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। ফজরের পর বিপুল সংখ্যক মানুষ ময়াদানে জুড়তে থাকে। ময়দানে জায়গা না পেয়ে আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় তারা বসে দুয়ায় অংশগ্রহন করে।
আখেরি মোনাজাতের সময়
বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতের সময় ছিলো রবিবার সকাল ৯.৩০ টার দিকে। দুয়া পরিচালনা করেন আলমী শুরার শীর্ষ মুরুব্বী হযরত মাওলানা ক্বারী জুবায়ের সাহেব, পেশ ইমাম ও খতীব কাকরাইল মসজিদ ও মুহতামিম কাকরাইল মাদ্রাসা।
ইজতেমার আখেরি মোনাজাত কবে
তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বী এবং সরকার পক্ষের এক বৈঠকে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি এবং ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে আখেরি মোনাজাত ২ ফেব্রুয়ারি রোজ রবিবার আনুমানিক সকাল ৯.৩০ মিনিটে টংগী ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে ইন শা আল্লাহ।
আখেরি মোনাজাতের দোয়া
আখেরি মোনাজাতের দোয়া সম্পূর্ন এখানে লিখে দিয়েছি। আল্লাহপাক সবাইকে ক্ষমা করে তার হেদায়েতের চাদরে আবৃত করে নিন (আমিন)।
হে আল্লাহ! আমাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। দুনিয়াতেও মাফ করে দেন, আখিরাতেও মাফ করে দেন। আমাদের জিন্দেগীকে সুন্দর করে দেন, নেক জিন্দেগী নসীব করে দেন। পুরা উম্মতের গুনাহকে মাফ করে দেন। আপনার হাবীবের ইয়াতীম উম্মতের গুনাহকে মাফ করে দেন। আপনি আমাদের এরকম পাক সাফ করে দেন যেরকম সাদা কাপড় ধুয়ে পাক সাফ করে। আমদের গুনাহের আগুনকে নিভাইয়া দেন। ঈমানের জিন্দেগী নসিব করে দেন। বেঈমানের জিন্দেগি থেকে হেফাজত করেন। যে ঈমানের উপর আপনি রাজি যে ঈমানের উপর আখিরাত পার হবে সেই ঈমান আমাদের নসীব করে দেন। যে ঈমানের উপর দুনিয়ার আপদ মুসীবত দূর হয়ে যায় সেই ঈমান আমাদের নসীব করে দেন। যে ঈমানের দ্বারা ইবাদত সহীহ হয়ে যায়, যে ঈমানের দ্বারা গুনাহ থেকে বাচা যায় এরকম ঈমান পুরা উম্মতকে নসীব করেন। ঈমানের হাওয়া চালিয়ে দেন, হেদায়েতের হাওয়া চালিয়ে দেন, ঈমানের সাথে খাতেমা নসীব করেন। সুন্নতওয়ালা জিন্দেগী নসীব করে দেন, সুন্নতের মহব্বত পয়দা করে দেন, আপনার হাবীবের মহব্বত পয়দা করে দেন। দুনিয়ার সব জিনিসের চেয়ে আপনার হাবীবের মহব্বত বেশী পয়দা করে দেন। আপনি ও আপনার নবীর সাথে মহব্বত পয়দা করে দেন। বেঈমানী মওত থেকে হেফাজত করেন, ঈমানী মওত নসীব করেন। মউতের সময় ঈমানী কালিমা মুখে জারি করে দিয়েন। কেউ ইচ্ছা করে পারবে না, আপনি যার মুখে জারি করবেন সেই পড়তে পারবে।
হুসনী ইবাদত নসীব করে দেন। আমাদের নামাজ সুন্দর করে দেন, আমাদের সমস্ত ইবাদত সুন্দর করে দেন।
ইলমওয়ালা জিন্দেগী নসীব করে দেন, জিহালতের জিন্দেগী থেকে হেফাজত ফরমান। ইলমের মহব্বত যেমন আপনি আসমান থেকে নামাইছেন সমস্ত মানব জাতির হেদায়েতের জন্য সেই এলেমের সাথে আমাদের তাওয়াল্লুক নসীব করে দেন। ইলমের মহব্বত পয়দা করে দেন, ইলমওয়ালাদের মহব্বত পয়দা করে দেন। ইলমের উপকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না।
জিকিরওয়ালা জিন্দেগী নসীব করে দেন, জিকিরের ধ্যান আমাদেরকে পয়দা করে দেন। গফলতি দূর করে দেন। গাফলতওয়ালা জিন্দেগী থেকে আমাদের হেফাজত করেন। আমাদেরকে জাকিরিনদের মধ্যে শামিল করে নেন। আমাদেরকে গাফেলদের দলভূক্ত করবেন না।
আমাদের আখলাককে সুন্দর করে দেন। সকল হকওয়ালাদের হক আদায় করার তৌফিক দিয়ে দেন। কারও হক মাথায় নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করবেন না। সমস্ত মাখলুকের হক আদায় করার তৌফিক নসীব করে দেন। আপনার হকও আদায় করার তৌফিক দেন।
হে আল্লাহ! আমরা ঈমান আনছি আপনার উপর আমাদের ঈমানকে আপনি কবুল করেন। আমরা টুটাফাটা ইবাদত যাই করছি আপনি আমাদের ইবাদতকে কবুল করেন। ভূল ভ্রান্তিকে মাফ করে দিয়ে পুরা পুরা আজর ও সওয়াব আমাদেরকে দান করেন। ঈমানের হাকীকত আমাদের দীলের ভিতর নসীব করে দেন। আমাদের ঈমানের জোড়কে বাড়াইয়া দেন। কোন হালত, কোন ভয়, কোন শক্তি, কোটি কোটি টাকা যেন আমাদের ঈমান কেড়ে নিতে না পারে। এরকম মজবুত ঈমান আমাদেরকে নসীব করে দেন। আপনি যখন ঈমান নসীব করছেনই ঈমানের সংগে আপনার দরবারে হাজির হওয়ার তৌফিক দেন। যেদিন আপনার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হবে, অবশ্যই হবে এছাড়া আর কোন উপায় নাই, সেই সাক্ষাতের দিনটি আপনি আনন্দময় করে দিয়েন, সবচেয়ে খুশীর দিন বানিয়ে দিয়েন। আপনি আমাদেরকে ঐসমস্ত লোকদের মধ্যে সামিল করবেন না যাদের আপনার সাথে সাক্ষাতের দিনটি সবচেয়ে খারাপ দিন হয়।
হে আল্লাহ! মুসলমানের জান মাল ইজ্জত আবরুর হেফাজত করেন। হাকীকি ঈমান নসীব করেন, পুরা জিন্দেগী সুন্দর করে দেন। আপনার এতাতওয়ালী জিন্দেগী বানিয়ে দেন। মুসলমানের মুলককে হেফাজত করেন, আপনার কুদরত দিয়ে হেফাজত করেন। আপনার কুদরত আপনি যেরকম সমস্ত নবীদের শানে এস্তেমাল করেছিলেন, আপনি আপনার হাবীবের উম্মতের শানে ঐরকম কুদরতকে ব্যবহার করেন। আপনার হাবীবের উম্মতের জন্য আপনি ছাড়া আর কেউ নাই, আপনিই হেফাজত করেন। মুসলমানের মধ্যে আপোষে মহব্বত কায়েম করে দেন। ইন্তেফাক ও ইন্তেহাদ কায়েম করে দেন। ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি ও হানাহানি ক্ষতম করে দেন।
ইখলাসের দৌলত নসীব করে দেন, দুনিয়াকে রাজি খুশী নয় আপনাকে রাজি খুশি করার জন্যই নসীব করে দেন। আপনাকে রাজি করার জজবা আমরা চাইতেছি আপনার কাছে, আমাদের দীলের মধ্যে আপনাকে রাজি করার জজবা পয়দা করে দিন। আপনি আমাদের উপর রাজি হয়ে যান। আমাদের সমস্ত ভূল ভ্রান্তি, লোক দেখানো, রিয়াকারী, দুনিয়া ত্বলাবীকে মাফ করে দিয় রেজাওয়ালী জিন্দেগী নসীব করেন। আপনি আপনার উপর আমাদেরকে রাজি করে নেন।
দাওয়াতওয়ালা কামকে পুরা আলমের উপর জিন্দা করে দেন। আপনার মানসা মোতাবেক জিন্দা করে দেন। যেরকম দাওয়াতওয়ালা মেহনত করলে আপনি রাজি খুশী হয়ে যান ঐরকম মেহনত আপনি সারা দুনিয়াতে জিন্দা করে দেন। উম্মতকে এই মেহনতের উপর মুস্তাকিল করে দেন, এই মেহনতের মধ্যে লাগাইয়া দেন। সব রকমের রোকআউট বাধা বিপত্তিকে আপনি দূর করে দেন। এই কামকে হেফাজত করেন, মায়ের কোলে বাচ্চাকে আপনি হেফাজত করেন। মায়ের গর্ভের বাচ্চাকে আপনি যেমন হেফাজত করেন ঐরকম কুদরত দ্বারা আপনি এই কামকে হেফাজত করেন। উম্মতকে সহীহ দ্বীনে আসার তৌফিক নসীব করে দেন। দ্বীনকে উম্মতের মধ্যে দোবারা জিন্দা করে দেন। উম্মতের জান ও মাল আপনার নাফরমানির মধ্যে খরচ হয়ে যাইতেছে। উম্মতের জান ও মালকে আপনার রেজার জায়গায় খরচ করার তৌফিক দিয়ে দেন। উম্মতের জান ও মালের সহীহ এস্তেমাল দোবারা চালু করে দেন। দ্বীনকে দোবারা জিন্দা করার রাস্তায় এই জান ও মালকে খরচ করার তৌফিক দেন। দাওয়াতওয়ালা কামকে দুনিয়াতে দোবারা জিন্দা করে দেন, সাহাবাদের মতো জিন্দা করে দেন। সাহাবাওয়ালা জজবা আমাদেরকে নসীব করে দেন। দ্বীন থাকবো আমরা থাকবো, দ্বীন থাকবে না আমরা থাকবো এরকম যেনো না হয়। দ্বীনের জন্য জান মাল কোরবান করার তৌফিক নসীব করে দেন, জান দেয়ার তৌফিক নসীব করে দেন। আপনার রাস্তায় শাহাদাতের শখ ও জজবা নসীব করে দেন। এই কামকে হেফাজত করেন, হার ফিত্তিনের ফিৎনা থেকে হেফাজত করেন। দুনিয়ার সমস্ত বাতিল শক্তি থেকে নবীওয়ালা কামকে হেফাজত করেন। হক্বের ঝান্ডাকে উচু করে দেন, বাতিলের ঝান্ডাকে নিচু করে দেন। বাতিলের স্কীমকে ফেল করে দেন। বাতিলের ষড়যন্ত্রকে ফেল করে দেন। বাতিলের ষড়যন্ত্রকে বাতিলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। বাতিলকে বাতিলের স্কীমের মধ্যে খতম করে দেন। বাতিলের সব রাস্তা বন্ধ করে দেন। হক্বের সব রাস্তাকে খুলে দেন। আপনার বান্দাদের জন্য হক্বের রাস্তাকে খুলে দেন, হক্বের উপর চলা সহজ করে দেন। গায়েবী খাজানাকে খুলে দেন, কদমে কদমে নুসরত করেন।
যারা দুয়ার জন্য বলছে, লিখছে সকলের জায়েজ হজতকে পুরা করে দেন। পেরেশান হালদের পেরেশানিকে দূর করে দেন। বিমারদেরকে শেফায়ে কামেলা আজেলা নসীব করে দেন। যারা করজে আটকা আছে তাদেরকে গায়েব থেকে করজ আদায় করার সূরত পয়দা করে দেন। যারা নাহক্ব মামলা মোকাদ্দমার মধ্যে আটকে আছে তাদের খালাসী নসীব করে দেন। বেআওলাদদের নেক আওলাদ নসীব করে দিন। বিবাহযোগ্য ছেলে মেয়েদের বিবাহের এন্তেজাম করে দেন। বেরোজগারদের হালাল রোজগারের ব্যবস্থা করে দেন।
আয় আল্লাহ! এই লাখো মজমা কেউ আসেনি, আপনি নিয়ে আসছেন। সবাই আশা করে আছে দুয়া কবুল হবে, আপনি আমাদেরকে নিরাশ কইরেন না। আমরা যা চাইছি তাও আমাদেরকে নসীব করে দেন যা চাইতে পারি নাই তাও আমাদের নসীব করে দেন। আম্রাতো চাইতেও পারি না, আপনি এই লাখো মজমাকে নিরাশ কইরেন না। যারা এই দুয়ার মধ্যে শরীক হইছে সকলের দুয়াকে কবুল করেন, সকলের জায়েজ মাকসাদকে পুরা করে দেন। হে আল্লাহ! আপনি দেখছেন, এই ময়দানের মধ্যে তারা কত কষ্ট করছে, তারাতো এই কষ্ট এই জন্য করছে আপনি তাদের দুয়াকে কবুল করবেন, আপনি কাউকে নিরাশ কইরেন না। আপনি সকলের দুয়াকে কবুল করে নেন। (আমিন)